মাদকতা প্রতিরোধে ধর্মীয় অনুশাসন ও সামাজিক সচেতনতার গুরুত্ব তুলে ধরতে “ইয়াবা ও নেশা প্রতিরোধে রমজানের প্রভাব” শীর্ষক একটি বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার, ১৯ মার্চ, মাদানী মজলিস বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে রাজধানীর রামপুরা ওয়াপদা রোডের পাওয়ার হাউজ জামিয়াতুল আসআদ আল ইসলামিয়া মিলনায়তনে এ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাদানী মজলিস বাংলাদেশ-এর সভাপতি শায়খ মুফতী হাফীজুদ্দীন। তিনি ইয়াবা ও নেশা আসক্তির প্রধান কারণ হিসেবে পারিবারিক কলহ, আর্থিক সংকট, কর্মজীবনে ব্যর্থতা, পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনে ব্যর্থতা এবং প্রেম-ভালোবাসায় ব্যর্থতার মতো বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
নেশা প্রতিরোধের জন্য তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কথা বলেন— সমাজে ইয়াবা ও মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা, আসক্তদের সাথে সহমর্মিতা ও ভালো ব্যবহার করে তাদের মাদক ছাড়তে উদ্বুদ্ধ করা, এবং ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার প্রচার করা।
এছাড়া, মাদকবিরোধী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মাদানী মজলিস বাংলাদেশ ইতোমধ্যে কয়েকটি উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ‘মদ-মাদকতা’ নামে পুস্তিকা রচনা, লিফলেট বিতরণ, জাতীয় পর্যায়ে সেমিনার আয়োজন, ইমাম ও খতিবদের মাধ্যমে মসজিদে সচেতনতামূলক আলোচনা, এবং নেশাগ্রস্তদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে তাদের সাহায্য করা।
সভায় মাদক প্রতিরোধে কিছু কার্যকর সুপারিশও উত্থাপন করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে— স্কুল-কলেজে কাউন্সেলিং ব্যবস্থা চালু করা, সমাজের সবাইকে নেশার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অবহিত করা, নিরাময় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা এবং সেখানে মানসিক কাউন্সেলিং প্রদান, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা নিশ্চিত করা, এবং মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক ডকুমেন্টারি তৈরি করা ও প্রচার করা।
সভায় উপস্থিত ছিলেন নয়াটোলা ও রামপুরার আয়িম্মায়ে মাসাজিদের সভাপতি মাওলানা শিব্বির আহমদ, মহানগর বাইতুল নূর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মাহফুজুর রহমান, আওয়ার ইসলাম টুয়েন্টিফোর ডটকম-এর সিনিয়র সম্পাদক মাওলানা হুমায়ূন আইয়ূব, জামিয়া ইকরা বাংলাদেশ-এর সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতী মোহাম্মদ উল্লাহ ইয়াহইয়া, খিলগাঁও নবীনবাগ জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতী আবদুল হালীম, গাজীপুর চাপুলিয়া জামে মসজিদের খতিব মুফতী মাহবুবুর রহমান, জামিয়াতুল আসআদ আল ইসলামিয়ার সিনিয়র মুফতী মাওলানা আরমান সাদিক, এবং মাওলানা জামিল ইকবাল।
আলোচকরা মাদকের ভয়াবহতা, তরুণদের ওপর এর প্রভাব এবং পরিবার ও সমাজের করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তারা উল্লেখ করেন, “মাদক শুধু ব্যক্তির জীবন ধ্বংস করে না, বরং এটি সমাজের শেকড়েও আঘাত হানে।” ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক সংহতি শক্তিশালী করা গেলে মাদকের ভয়াবহ থাবা থেকে তরুণদের রক্ষা করা সম্ভব। রমজানের শিক্ষা আমাদের আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধির দিকে পরিচালিত করে, যা মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সহায়ক হতে পারে।
সভায় উপস্থিত স্থানীয় সমাজপতি ও জনপ্রতিনিধিরাও মাদকের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। আলোচনা শেষে মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়।