সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৬ অপরাহ্ন

১০% খেলাপি ঋণ: লভ্যাংশ দিতে পারবে না ব্যাংকগুলো

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট টাইম: রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫
  • ১ বার পঠিত

খেলাপি ঋণে জর্জরিত ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক; ১০ শতাংশের বেশি ঋণ খেলাপি হলে দিতে পারবে না লভ্যাংশ।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলারে ব্যাংকগুলোকে এ নির্দেশনা দিয়েছে।

একইসঙ্গে নগদ জমা ও বিধিবদ্ধ জমায় ঘাটতির কারণে কোনো ব্যাংকের ওপর আরোপ করা দণ্ডসুদ ও জরিমানা অনাদায়ি থাকলেও লভ্যাংশ দেওয়া যাবে না।

এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, “ব্যাংকগুলোর জন্য ডিভিডেন্ড দেওয়ার নীতিমালা কিছুটা কঠিন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পদক্ষেপ ব্যাংকগুলোর সুশাসন নিশ্চিতে ভূমিকা রাখবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকের স্পন্সর ডিরেক্টররা নিজেদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে সেগুলো ফেরত দিচ্ছেন না। ফলে অনেক ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। আবার তারাই যখন ব্যাংকের বোর্ডে বসেন, ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকা স্বত্ত্বেও লভ্যাংশ অনুমোদন করেন।

>> শুধু বিবেচ্য পঞ্জিকাবর্ষের মুনাফা থেকে নগদ লভ্যাংশ দেওয়া যাবে। আগের পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকে কোনো নগদ লভ্যাংশ দিতে পারবে না ব্যাংক।

>> ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ও বিনিয়োগের হার মোট ঋণ ও বিনিয়োগের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের বেশি হলে লভ্যাংশ দিতে পারবে না।

>> ঋণ, বিনিয়োগ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে কোনো প্রকার নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি থাকলে লভ্যাংশ দিতে পারবে না।

>> নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো প্রকার বিলম্ব সুবিধা গ্রহণ করলে ও বিলম্ব সুবিধা বহাল থাকলে কোনো প্রকার লভ্যাংশ ঘোষণা করা যাবে না।

>> শর্ত পূরণ করে যেসব ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারবে সেগুলো কত লভ্যাংশ দিতে পারবে তাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, লভ্যাংশের পরিমাণ ‘ডিভিডেন্ড পে আউট রেশিও’ দ্বারা নির্ধারিত হবে।

>> মডিভিডেন্ড পে আউট রেশিও হবে ব্যাংকের ঘোষিত লভ্যাংশের পরিমাণ ও ব্যাংকের কর-পরবর্তী মুনাফার অনুপাত অনুযায়ী।

>> তবে ঘোষিত লভ্যাংশের পরিমাণ কোনোভাবেই পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশের বেশি হবে না।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটায় সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতে চাপ সৃষ্ট হয়েছে। তা মোকাবিলা করে ব্যাংকগুলো যাতে দেশের অর্থনীতিতে যথার্থ অবদান রাখতে পারে সে জন্য লভ্যাংশ বিতরণের নীতিমালা করা হয়েছিল।

তখন নীতিমালার উদ্দেশ্য ছিল ব্যাংকগুলোর মুনাফা যথাসম্ভব অবণ্টিত রেখে মূলধন কাঠামো অধিকতর শক্তিশালী ও সুসংহত করার মাধ্যমে পর্যাপ্ত তারল্য বজায় রাখা। বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি, আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা, ব্যাংকসমূহের আর্থিক সক্ষমতা এবং ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের রিটার্নের বিষয়টি সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ বিতরণের ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। তাদের ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা মেনে চলতে বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়

>> যেসব ব্যাংকের নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর পর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে আড়াই শতাংশ ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১৫ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে পারবে সেগুলো তাদের সামর্থ্য অনুসারে নগদ ও স্টক লভ্যাংশ দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে তাদের ডিভিডেন্ড পে আউট রেশিও সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশের বেশি হবে না।

>> যেসব ব্যাংক সাড়ে ১২ শতাংশের অধিক কিন্তু ১৫ শতাংশের এর কম মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম সেগুলো তাদের সামর্থ্য অনুসারে নগদ ও স্টক লভ্যাংশ দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে তাদের ডিভিডেন্ড পে আউট রেশিও সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশের অধিক হবে না।

>> এছাড়া যেসব ব্যাংকের সাড়ে ১২ শতাংশের কম তবে ন্যূনতম রক্ষিতব্য মূলধন ১০০ শতাংশের বেশি হবে সেগুলো তাদের সামর্থ্য অনুসারে শুধু স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে।

নতুন এ নীতিমালা চলতি ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে ব্যাংকসমূহের জন্য প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ ২০২৬ সালে যে লভ্যাংশ দেওয়া হবে সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। তবে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে ব্যর্থ যেসব ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিলম্ব সুবিধা নিয়েছে, তারা ২০২৪ সালের জন্য চলতি বছরে কোনো লভ্যাংশ দিতে পারবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩
themesba-lates1749691102