গুম, খুন ও আয়নাঘরের নৃশংসতায় জড়িত খুনিদের দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। সমাবেশে দলের চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, গুম, খুন, গণহত্যার বিচার না করলে খুনিরা সুযোগ পেলে আবার রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠবে। গণঅভ্যুত্থানের সকল পক্ষকে তারা আবার আয়নাঘরে বন্দি করবে। তিনি ভারত সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন; জাতিসংঘ ঘোষিত গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে আপনাদের দেশ থেকে বহিস্কার করুন, নাহয় নিজেদেরকে গণতন্ত্রী ও মানবাধিকার রক্ষাকারী হিসেবে পরিচয় দেবেন না। ৫ আগস্ট সরকারের পতন না হলে আন্দোলনকারীদের অনেকেই পরে গুম খুনের শিকার হতেন বলে তিনি আশাংকা প্রকাশ করেন।
পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসাইনের সঞ্চালনায় বিজয় নগরস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন বিজয় একাত্তর চত্বরে বিকেল ৩টায় সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে আরও বক্তব্য রাখেন পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান বিএম নাজমুল হক, লে. কর্ণেল (অবঃ) দিদারুল আলম, লে. কর্নেল (অবঃ) হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ সহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
সভাপতির বক্তব্যে মজিবুর রহমান মঞ্জু আরও বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতেই আমরা গুম খুনের বিচার চেয়েছি। তখন সরকার বলেছে আয়নাঘর নামে কিছু নাই। আয়না ঘর থেকে ফিরে আসা একজন সেনা কর্মকর্তা আয়না ঘরের লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছিলেন কিন্তু আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা এটাকে বার বার অস্বীকার করেছে। আজ গুম কমিশন যখন তদন্ত করে আয়না ঘর বের করেছে, প্রধান উপদেষ্টা দেশী-বিদেশী সাংবাদিকদের নিয়ে আয়না ঘর পরিদর্শন করেছেন তখন তাদের আসল চেহারা প্রকাশ হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগকে আমরা বার বার বলেছি এই দিন চিরদিন থাকবে না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, শহীদের রক্তের দাগ শুকানোর আগেই এখন আমরা শুনি কেউ কেউ বলেন, বারবার ফ্যাসিবাদ নাকি শুনতে ভালো লাগে না। কেউ কেউ আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করার কথা বলেন। আমরা এবি পার্টি বলি, সবার আগে আমার ভাইয়ের, বোনের খুনীদের বিচার চাই। তিনি আমলা, সাংবাদিক, পুলিশ ও সামরিক প্রশাসনের কর্তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সবাই আন্তরিক ভাবে বিচারকাজে সহায়তা করুন, নইলে আপনাদেরও হাসিনা একসময় আয়না ঘরে ঢুকাবে।
দলের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলের ১৬ বছরে যে গুম, খুন, গনহত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধ ও শত শত আয়নাঘরের বন্দীশালা করা হয়েছিল তার তুলনা শুধু হিটলারের নাৎসী আর মুসোলিনীর ফ্যাসিষ্টদের সাথে হতে পারে। হাজার হাজার নাগরিকের জীবন, লাশ, পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের স্মৃতি পর্যন্ত হারিয়ে গেছে, তাদের গল্প জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের পক্ষ থেকে আজ স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। আমরা জাতিসংঘ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি বঙ্গীয় হিটলারের আয়নাঘরের নির্যাতনকে দুনিয়ার সামনে তুলে ধরবার জন্য। আমরা জাতীয় ঐক্যমতের কমিশনকে আহ্বান করছি নতুন বাংলাদশকে মানবাধিকারের ভিত্তিতে গড়ে তুলুন।
বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, এবিএম খালিদ হাসান, যুবপার্টির আহবায়ক শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, সদস্য সচিব হাদিউজ্জামান খোকন, এবি পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী নাসির, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শাহ আব্দুর রহমান, ছাত্রপক্ষের আহবায়ক মোহাম্মদ প্রিন্স, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল হালিম খোকন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শাহজাহান ব্যাপারীসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।