রাজধানীর উত্তরায় ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশে তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘ইন্টার স্কুল স্টেম ফেস্ট’। এবার রাজধানীর নামীদামী ৫০টি স্কুল এই বিজ্ঞান উৎসবে অংশগ্রহণ করে। দেশসেরা স্কুলগুলোর ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এবারের বিজ্ঞান বিষয়ক অভিনব আয়োজন স্টেম ফেস্ট।
শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় দুই দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।
আয়োজকরা জানান, প্রায় ১৫০০ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে প্রদর্শিত হয় ১১৫টি বিজ্ঞান প্রজেক্ট। বায়োকেমেস্ট্রি, রোবোটিক্স, পদার্থ, রসায়নসহ বিজ্ঞানসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে এই উৎসবে আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ প্রজেক্ট শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্কতা ও বিজ্ঞান ভাবনার পরিচয় দিয়েছে।
উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য মো. খসরু চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমেস্ট্রি ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক জনাব আবদুল খালেক এবং মালয়েশিয়ার ইউসিএসআই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ ব্রাঞ্চের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক দাতোয়ার মোহাম্মদ সালেহ। স্বাগত বক্তব্য দেন ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ-এর প্রিন্সিপাল রোকসানা জেরিন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা ১৮ আসনের সংসদ সদস্য মো. খসরু চৌধুরী এই উৎসবের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এ ধরনের আয়োজন বিজ্ঞান চর্চায় বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এই বিজ্ঞানমুখী শিক্ষার্থীদের মাধ্যমেই বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ গৌরবের অবস্থানে অর্জন করতে পারবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
স্বাগত বক্তব্যে ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ-এর প্রিন্সিপাল রোকসানা জেরিন বলেন, দিন দিন স্টেম ফেস্টের পরিসর বাড়ছে। শুধু আমাদের স্কুল নয়, এ বছর আমাদের প্রতিযোগিতায় যুক্ত হয়েছে বড় বড় ৫০টি স্কুল। এ বছর তৃতীয়বারের মতো আমাদের ইন্টার স্কুল স্টেম ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম থেকেই শিক্ষার্থীরা এই বিজ্ঞান উৎসবের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী ছিল। এ ধরনের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান এবং আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষতা প্রমাণ করছে।
গত কয়েক বছরে স্টেম ফেস্টে অংশগ্রহণকারীদের অনেকে দুবাইয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। এটি আমাদের অনেক বড় পাওয়া। এবারও এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক সুনাম অর্জন করবে, তিনি বলেন।
বিজ্ঞানবিষয়ক আলোচনা ও প্রদর্শনীর পাশাপাশি মিলনায়তনে ছিল কিছু মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় ছিল দলীয় গান- ‘দেয়ালে দেয়াল’, ‘ফিরিয়ে দাও’ সহ কিছু সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
অলিম্পিয়াডের প্রথম দিন শুক্রবার স্টেম ফেস্টের আয়োজনে ছিল ‘হোপিয়ান ম্যাথ অলিম্পিয়াড’। এতে বিভিন্ন স্কুলের প্রায় ৯০০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্য থেকে পুরস্কৃত হয়েছে ১৫ জন শিক্ষার্থী।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন ১৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার স্কুলের মাঠে সকাল ১০ টা থেকেই চালু হয় বিভিন্ন স্টল। প্রতিটি স্টলে ছিল নানা ধরনের বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট প্রদর্শনী। ছিল আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ১১৫টি প্রজেক্ট। এছাড়াও ছিল ‘হোপিয়ান বায়োকেমেস্ট্রি অলিম্পিয়াড’। এতে অংশ নিয়েছে প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থী। এ বছর ৩টি ক্যাটাগরিতে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুধু ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি ক্যাটাগরি, সপ্তম থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি ক্যাটাগরি এবং দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে আরও একটি ক্যাটাগরি। এসব ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে প্রায় ১৫০০ জন শিক্ষার্থী।
স্কুল মাঠের প্রতিটি স্টলে ছিল নানা প্রজেক্ট, পাশাপাশি বোর্ডে প্রজেক্ট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য লেখা ছিল, শিক্ষার্থীরা দর্শনার্থীদের প্রজেক্টগুলোর ব্যবহার ও সম্ভাবনা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেছে। এবারের উল্লেখযোগ্য প্রজেক্টগুলোর মধ্যে রয়েছে মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, সিকিউরিটি ড্রোন, রোবোটিক আর্ম, রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি, সেলফ ব্যালেন্সিং রিমোট, স্মার্ট রোবটস, পেপার রিসাইকেল মেশিনসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক প্রজেক্ট। বিজ্ঞানী এরিস্টটল এবং নিউটনের সাজেও ঘুরে বেড়িয়েছে দুজন শিক্ষার্থী। এছাড়া দুই দিনই ছিল ‘নাসা রোভার ডিসপ্লে’ শীর্ষক বিশেষ একটি প্রদর্শনী।
ইন্টার স্কুল স্টেম ফেস্টে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল আকর্ষণীয় উপহার। প্রত্যেকেই পেয়েছে একটি নোটবুক, চাবির রিং, কলম, ক্যাপ এবং খাবার। বিজয়ীরা পুরস্কার হিসেবে পেয়েছে অ্যাওয়ার্ড এবং সার্টিফিকেট।
প্রসঙ্গত, স্টেম ফেস্ট এরই মধ্যে বাংলাদেশে স্কুল পর্যায়ে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি উল্লেখযোগ্য উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই উৎসবে অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বিষয়ে পৃথিবীর অগ্রসর দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছে। প্রথম স্টেম ফেস্টে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের একটি দল গত বছর দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ‘দুবাই গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছে।
অপরদিকে, ইন্টারন্যাশনাল হোপ স্কুল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এই স্কুলটি পড়াশোনা, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিভিত্তিক চর্চার পাশাপাশি বিজ্ঞানচর্চায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।