বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নিউক্লিয়াস হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল ৩ ডিসেম্বর। এ সম্মেলনকে ঘিরে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। নেতা-কর্মীদের মধ্যে বেড়েছে উৎসাহ উদ্দীপনা। একইসঙ্গে পদ-পদবীর জন্য নানামুখী তদবির-তৎপরতাও চলছে।
সম্মেলনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। নির্বাচন কমিশন ও বিভিন্ন উপ-কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুতনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার অনুশাসনের আলোকে একটি সৃজনশীল, নানন্দিক, ব্যয়সাশ্রয়ী ও সার্থক সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’
ছাত্রলীগের সম্মেলনের সময় এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাস জুড়ে নতুন কমিটি নিয়ে আলোচনাও জোরদার হচ্ছে। কারা আসছেন ঢাবি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে, কোন এলাকা পাচ্ছে প্রাধান্য, কার পারিবারিক ঐতিহ্য কী- এসব নানা আলোচনায় এখন সরগরম বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন, টিএসসি, হাকিম চত্বর ও পিয়ারু চত্বর।
অনেক নেতাকর্মীর কাছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব প্রায় সমান গুরুত্বপূর্ণ। ফলে যারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসার আলোচনায় আছেন তারাই আবার আসতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃত্বেও। অর্থাৎ দুই জায়গাতেই আগ্রহ আছে অনেক নেতার। ঢাবি ছাত্রলীগের নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন বিভিন্ন হল শাখার শীর্ষ নেতারা। আবার নারী নেত্রীদের সম্ভাবনাও দেখছেন কেউ কেউ।
সাংগঠনিক দক্ষতা, আঞ্চলিক ও পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় এবার বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির শীর্ষ কয়েকটি পদের জন্য হল পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তানভীর শিকদার ও মিশাত সরকার, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের সভাপতি শহিদুল হক শিশির, সাধারণ সম্পাদক মো. হোসেন, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সভাপতি কামাল উদ্দিন রানা ও সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসেন, স্যার এফ রহমান হলের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম, ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ হলের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন নাইম, সূর্যসেন হলের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমান, জসীম উদ্দিন হলের সভাপতি মো. সুমন খলিফা, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হোসেন শান্ত, বিজয় একাত্তর হলের সাধারণ সম্পাদক আবু ইউনুস।
কেন্দ্রীয় ও ঢাবি নেতাদের মধ্য থেকে আলোচনায় আছেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ ফয়সাল মাহমুদ, উপ-দপ্তর সম্পাদক মেহেদী হাসান বাপ্পি, উপ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত, সহ-সম্পাদক এস.এম রাকিব সিরাজী, ঢাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সবুজ, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাবেক ভিপি এম.এম কামাল উদ্দিন।
আলোচনায় আছেন বেশ কয়েকজন নারী নেত্রীও। শীর্ষ দুই পদের দৌড়ে আলোচনায় আছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফরিদা পারভীন, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক উপ-সম্পাদক রওনক জাহান রাইন, উপ-সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক ফাল্গুনী দাস তন্বী, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের সভাপতি রাজিয়া সুলতানা কথা।
ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল শাখার নেতারা মনে করছেন হল পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়া নেতাদেরই বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে আসা উচিত।
এ বিষয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখার সভাপতি তানভীর শিকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ের ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন হল ছাত্রলীগের নেতারা। তারা যোগ্যতা ও পরিশ্রমের পরীক্ষা দিয়ে হলের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। হল শাখার নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসলে ছাত্রলীগ আরও সুসংগঠিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের সভাপতি শহীদুল হক শিশির ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এমন নেতৃত্ব চাই, যে নেতৃত্ব রক্তে ও চেতনায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে; চিন্তা-কর্মে জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার আদর্শ অনুসরণ করে। সময়ের প্রয়োজনে যারা মেধা, মনন ও সামর্থ্য দিয়ে দেশ ও দশের পাশে থাকতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তারা নেতৃত্বে আসুক। হল শাখার নেতারা ইতোমধ্যে এসব ক্ষেত্রে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে।
নারী নেত্রী রনক জাহান রাইন বলেন, ছাত্রলীগের মূল নেতৃত্বে নারীরা এখনো সেভাবে আসেনি। তবে আমরা ছাত্রলীগের অনেক নারী কর্মী রয়েছি। আমরা প্রত্যাশা করি, পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ছাত্রলীগের সকল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারী ক্ষমতায়নের বিষয়টি যেহেতু বিশেষভাবে দেখছেন সেহেতু আমরা বিশ্বাস করি, নারীদের মূল নেতৃত্বে নিয়ে আসার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী বিবেচনা করবেন।
কাদের নেতৃত্বে আসার সুযোগ আছে- জানতে চাইলে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘যারা দূরদর্শী, দক্ষ সংগঠক, সংস্কৃতিমনা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করতে পারবেন তারাই নেতৃত্বে আসবেন। বিতর্কিত ব্যক্তি এবং সংগঠনের সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছে এমন কারও নেতৃত্বে আসার সুযোগ নেই।’
জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, ‘যারা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করেছে, নিয়মিত ছাত্র, মেধাবী এবং পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, বিতর্কমুক্ত তাদের মধ্য থেকেই ঢাবি ছাত্রলীগের নেতৃত্ব আসবে। কেন্দ্রীয় কমিটি, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কিংবা হল শাখার যে কেউ নেতৃত্বে আসতে পারেন। সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।’
দীর্ঘ সাড়ে চার বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলন। ৩ ডিসেম্বর (শনিবার) বিকেল ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি আর প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস।