সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৮ পূর্বাহ্ন

অস্বস্তিতে আ.লীগ, চিন্তামুক্ত জাপা

উত্তরা নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম: বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ৩৭৩ বার পঠিত

রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নিয়ে দলের বহিষ্কৃত সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা নানান রকম জটিলতার গুঞ্জন ছড়ালেও শেষ পর্যন্ত সমাধান মিলেছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকেই সমর্থন দিয়েছেন দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ। এতে করে ভেস্তে গেছে রাঙ্গানুসারী আরেক বহিষ্কৃত সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান একেএম আব্দুর রউফ মানিকের লাঙ্গল নিয়ে প্রার্থী হবার স্বপ্ন।

রওশন এরশাদের দেশে ফেরা আর জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আদেশ স্থগিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে বিভেদ ভুলে ঐক্যে ফেরার ইঙ্গিতে এখন রংপুরে প্রার্থী নিয়ে চিন্তামুক্ত জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে মেয়র প্রার্থী মোস্তফাও রয়েছেন বেশ ফুরফুরে মেজাজে। তবে বহিষ্কৃত সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা পড়েছেন ইমেজ সংকটে। তার এমন কাণ্ডে সাধারণ মানুষের মুখে এখন একটাই কথা ‘শেষে তো নথ খসালি, তবে কেন লোক হাসালি?’ যদিও  রওশন এরশাদ দেশে ফেরার পর এখন পর্যন্ত মুখ খুলেননি জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় এই চিফ হুইপ।

মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) বেলা আড়াইটার দিকে নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেনের কাছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা করেছেন অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। এসময় তার সঙ্গে মনোনয়নবঞ্চিত জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র হিসেবে (বিদ্রোহী) মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আতাউর জামান বাবু ও কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার লতিফুর রহমান মিলন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

dhakapost

এদিকে, মনোনয়ন জমা দিয়ে হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া বলেন, রংপুরের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিতে উদগ্রীব হয়ে আছেন। ২৭ ডিসেম্বর হবে নৌকা মার্কার বিজয়ের দিন। রংপুরবাসী এদিন বিজয় ছিনিয়ে আনবে।  রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। তাদের সবার সহযোগিতা, সাধারণ মানুষের দোয়া এবং সমর্থন নিয়ে এবার নৌকা মার্কার জয় হবে ইনশাআল্লাহ।

বিদ্রোহী হিসেবে অপর প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার বিষয়ে ডালিয়া বলেন, এ বিষয়ে এখনই কিছু বলার নেই। সময় এখনও আছে। শেষ পর্যন্ত তারা নাও থাকতে পারেন। বিষয়টি সম্পর্কে কেন্দ্র অবগত আছে। এ বিষয়ে কেন্দ্র ব্যবস্থা নেবে।

অন্যদিকে মনোনয়ন জমার পর জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, রংপুরের মানুষ অতীতে যেমন সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেনি তেমনি এবারও ভুল করবে না। অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পূর্ণ করতে আবারো লাঙল প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে জনগণ জয়যুক্ত করবে বলে আমার বিশ্বাস।

ইভিএম নিয়ে বাইরের কেউ যেন কোনো কারসাজি করতে না পারে সেজন্য নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সজাগ থাকারও আহ্বান জানান সাবেক এই মেয়র।

অন্যদিকে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা আগেই জানিয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে দলের অবস্থান তুলে ধরেন মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালানো বিএনপি নেতা কাওছার জামান বাবলা। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, রংপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম। রংপুরের সাধারণ জনগণ ও দলীয় নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে আমাকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য চাপও দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এই নির্বাচন বর্জন করায় এবং দলের পক্ষ থেকে আমাকে অনুমতি না দেওয়াতে নির্বাচনে মেয়র পদে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য আমি সম্মানিত ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি।

এছাড়া নির্বাচন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর রংপুর মহানগরের সাবেক আমির অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল। এতোদিন প্রচার-প্রচারণা চালালেও শেষ পর্যন্ত তিনিও মনোনয়ন জমা দেননি। এ ব্যাপারে রংপুর মহানগর জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান আমির এটিএম আজম খান জানান, স্বতন্ত্র হিসেবে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক মহানগর আমির মাহবুবার রহমান বেলাল প্রচার প্রচারণা চালিয়েছিলেন এবং মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত হয়েছে এই নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার। এ কারণে আমাদের প্রার্থীকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে।

অন্যদিকে মঙ্গলবার মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন বিকেল ৪টা পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে মেয়র পদে ১০ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৯৮ জনসহ সর্বমোট ২৭৭ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা করেছেন।

মেয়র পদে ১৩ জন মনোয়নপত্র সংগ্রহ করলেও জমা করেছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, আওয়ামী লীগ মনোনীত অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, জাসদের শফিয়ার রহমান, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম, স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন, মেহেদী হাসান বনি, আবু রায়হান ও আতাউর জামান বাবু।

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব আবদুল বাতেন জানান, মঙ্গলবার শেষ দিনে মেয়র পদে ১০ জনসহ ২৭৭ প্রার্থী মনোনয়ন জমা করেছেন। এদের মধ্যে ১১টি সংরক্ষিত আসনের বিপরীতে ৬৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ৩৩ সাধারণ আসনের বিপরীতে ১৯৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়ন জমা করেছেন।

প্রসঙ্গত, এবার তৃতীয় বারের মতো রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই এবং ৮ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে পরের দিন ৯ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দের পর প্রার্থীরা ১৭ দিন প্রচার-প্রচারণার সুযোগ পাবেন। ২৭ ডিসেম্বর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের সঙ্গে বর্ধিত এলাকার (সাবেক সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে) আরও ১৮টি ওয়ার্ড যুক্ত করে ২০১২ সালের ২৮ জুন মোট ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশন গঠন করা হয়। এরপর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝণ্টু প্রথম নগরপিতা হিসেবে নির্বাচিত হন। বর্তমানে এই সিটির জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। আর ভোটার রয়েছেন চার লাখেরও বেশি। ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর দ্বিতীয় নির্বাচনের সময় ভোটার ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। এতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা মেয়র নির্বাচিত হন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩
themesba-lates1749691102