করোনার জন্য বারবার পিছিয়ে গিয়ে এবার পর্দা উঠতে চলেছে ১৯তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী-২০২২-এর। তবে পিছিয়ে গেলেও বাংলাদেশের গর্বের এই আয়োজন ফিরে এসেছে আরো বড় কলেবরে। হয়ে উঠতে যাচ্ছে বিশ্ব শিল্পের মহামিলনে। আগামী ৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন।
সর্বশেষ দ্বিবার্ষিকে ৬৮টি দেশের শিল্পীরা অংশ নিয়েছিলেন। এবার বাংলাদেশসহ ১১২টি দেশের শিল্পীরা ছবি নিয়ে দ্বিবার্ষিকে আসছে অংশ নিতে। এশিয়ান আর্ট দ্বিবার্ষিককে কেন্দ্র করে শিল্পকলা একাডেমি জুড়ে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে।
সারা বিশ্বের সমকালীন শিল্পকলাকে প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিল্পপ্রেমী দর্শক ও সংগ্রাহকদের সামনে তুলে ধরতেই দ্বিবার্ষিক ভিত্তিতে উত্সবের আয়োজন করা হয়ে থাকে। দেশি-বিদেশি শিল্পীরা এসব শিল্পকর্মের মাধ্যমে তাদের সমকালীন চিন্তাভাবনাকে দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন।
উৎসবে বিদেশি শিল্পী যারা আসছেন, তাদের নিয়ে সেমিনার, শিল্পবিষয়ক পর্যালোচনামূলক আলোচনা, আর্ট ট্রিপ ও কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে—আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বিদেশি শিল্পীদের বাংলাদেশে সাত দিন থাকা খাওয়ার পাশাপাশি তাদের নিয়ে দেশের নানা প্রান্তে ভ্রমণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জানান, উৎসবে বিদেশি শিল্পীদের ছবি স্থান দেওয়ার পাশাপাশি দেশের নির্বাচিত শিল্পীরাও থাকছেন। এছাড়া মাস্টার পেইন্টার ও স্বনামধন্য শিল্পীদের ছবিও স্থান পাচ্ছে উৎসবে। তাই শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার সবকটি গ্যালারিতে ছবি তো থাকছেই, সেসঙ্গে জাতীয় জাদুঘর, এশিয়াটিক সোসাইটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারিতে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। এছাড়া, দেশের প্রতিটি গ্যালারি এশিয়ান আর্ট বিয়েনাল উপলক্ষ্যে প্রদর্শনীর আয়োজন করবে—জানান তিনি।
এবারের আর্ট বিয়েনালে মোট ৪৬৫ জন শিল্পীর ৭১২টি শিল্পকর্ম স্থান পাচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশি ১৪৯ জন শিল্পীর ১৪৬টি শিল্পকর্ম স্থান পাচ্ছে। আর বিদেশি শিল্পীর সংখ্যা ৩১৬, তাদের শিল্পকর্মের সংখ্যা ৫৫৬টি।
প্রদর্শনীর বাইরে উনিশতম আসরে বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে রয়েছে পৃথক পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী উত্সবের চতুর্থ দিন ১১ ডিসেম্বর ভিনদেশি শিল্পীদের নিয়ে যাওয়া হবে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়, জাতির পিতার সমাধিসৌধে। ফিরতি পথে অতিথিদের নিয়ে থাকছে নৌকাভ্রমণ। উত্সবের পঞ্চম দিন ১২ ডিসেম্বর তারা পরিদর্শন করবেন রাজধানীতে ছড়িয়ে থাকা ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষ্যবহ বিভিন্ন স্থান। সেই তালিকায় রয়েছে ভাষাশহিদদের স্মৃতিবিজড়িত শহিদ মিনার, জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর এবং সংসদ ভবন।
এবারের আয়োজনে স্থান পাওয়াদের মধ্যে রয়েছেন—গ্রিসের ড্যানে স্ট্রাও, ঘানার ইব্রাহিম মাহামা, যুক্তরাজ্যের সুসান কলিন্স, নেপালের সুনিতা মহারাজ, কোরিয়ার মি ইয়ং আর্কিম, ইতালির অ্যালেক্স সালা ও যুক্তরাজ্যের কিমভি নুয়েন। চিত্রকর্ম, স্থাপনাশিল্প থেকে পারফরমিং আর্টের মাধ্যমে প্রদর্শনীতে নবমাত্রা জোগ করবেন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত এই শিল্পীরা। বিশ্বখ্যাত এসব শিল্পীর সমান্তরালে প্রদর্শনীতে আলো ছড়াবে বাংলাদেশের বরেণ্য ও প্রতিভাবান শিল্পীদের শিল্পকর্ম। সেই সুবাদে দেশের মাস্টার পেইন্টারদের শিল্পকর্ম নিয়ে থাকবে বিশেষ আয়োজন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পটুয়া কামরুল হাসান, এস এম সুলতান, সফিউদ্দিন আহমদ, কাইয়ুম চৌধুরীসহ দেশের পৃথিকৃৎ ও প্রয়াত বরেণ্য শিল্পীদের সৃষ্ট শিল্পকর্ম নিয়ে পৃথক প্রদর্শনী জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়ে। এবারের আসরে বাংলাদেশের বাইরে অংশগ্রহণকারী বাকি ১১২টি দেশের মধ্যে আছে আর্জেন্টিনা, অ্যাঙ্গোলা, বেনিন, ক্যামেরুন, মরক্কো, দক্ষিণ আফ্রিকা, থাইল্যান্ড, তিউনিসিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভেনিজুয়েলা, আফগানিস্তান, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, ইতালি, যুক্তরাজ্য এবং ইউক্রেন।