চট্টগ্রামে শিশু আলিনা ইসলাম আয়াতের খণ্ডিত লাশ উদ্ধারে সন্দেহভাজন খুনি আবিরকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল রবিবার বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। কিন্তু গতকাল রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত লাশের কোনো অংশ পাওয়া যায়নি।
পিবিআই চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমরা আয়াতের লাশের খণ্ডিত অংশ উদ্ধারে সাগরপার, নালা-নর্দমাসহ সব জায়গায় অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু লাশের কোনো অংশ পাওয়া যায়নি।
নর্দমার ময়লা পরিষ্কারে সিটি করপোরেশনের সহায়তা লাগবে। আসলে লাশের টুকরা সাগরে ফেলার ১২ দিন পর কোনো কিছু পাওয়া অনেক কঠিন। তার পরও আমাদের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে। ’
আবির প্রসঙ্গে পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এমন একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরও আবিরের মধ্যে তেমন অনুভূতি কাজ করছে না। সে খুব সাবলীলভাবে সব কিছুর বর্ণনা দিচ্ছে। ’
শিশু অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডটি টাকার জন্যই কি না―এমন প্রশ্নের জবাবে নাইমা সুলতানা বলেন, ‘লাশ উদ্ধার না হলে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না শিশুটিকে খুনের আগে নির্যাতন করেছিল কি না। তবে অপহরণের আগে অর্থের জোগান পেতে মায়ের সেলাই মেশিন বিক্রি করা, ৩০০ টাকা দিয়ে পুরনো মোবাইল সেট কেনা―এসব মিলিয়ে আমাদেরও ধারণা, মুক্তিপণ আদায়ের জন্য আয়াতকে অপহরণ করেছিল আবির। ’
গত ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার বন্দরটিলার নয়ারহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার বাসা থেকে পার্শ্ববর্তী মসজিদে আরবি পড়তে যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয় আলিনা ইসলাম আয়াত। এর পরদিন শিশুর বাবা সোহেল রানা এ ঘটনায় ইপিজেড থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করলেও কোনো হদিস মেলেনি। নিখোঁজের ১০ দিনের মাথায় গত বৃহস্পতিবার আবির আলী নামের এক যুবককে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে এ নিখোঁজ রহস্য উদঘাটন করে পিবিআই।
স্বীকারোক্তি মোতাবেক খুনের দায়ে অভিযুক্ত আবির আলী মুক্তিপণ আদায়ের জন্য শিশু আয়াতকে অপহরণ করেছিল। সেখানে ১৫ মিনিটের মধ্যে শ্বাসরোধ করে আয়াতকে খুন করে সে। নিজে ধরা পড়ে যাবে, এই ভয়ে শিশুটিকে কেটে ছয় টুকরা করে। পরদিন ১৬ নভেম্বর সকালে লাশের তিনটি টুকরা নগরীর আকমল আলী রোডের শেষ প্রান্তে বেড়িবাঁধের পর আউটার রিং রোড সংলগ্ন বে-টার্মিনাল এলাকায় সাগরে ভাসিয়ে দেয়। ওই দিন রাতে বাকি তিন টুকরা আকমল আলী রোডের শেষ প্রান্তে একটি নালায় স্লুইসগেটের প্রবেশমুখে ফেলে দেয় আবির।
গ্রেপ্তার আবির আলী (১৯) নগরীর ইপিজেড থানার দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের নয়ারহাট এলাকার ভাড়াটিয়া আজহারুল ইসলামের ছেলে। তাদের বাড়ি রংপুর জেলায়। শিশু খুনের মামলায় তার সম্পৃক্ততার তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।