অপ্রাপ্ত বয়সে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। বই-খাতা রেখে স্বামী-সংসারে মনোনিবেশ। কিন্তু মন পড়েছিল স্কুলের আঙ্গিনায়। সহপাঠীদের পড়ালেখা আর সাফল্যে ফের বই-খাতা ছুঁতে মন চায়। অন্যদের মতো পরীক্ষা দিতেও ইচ্ছে জাগে। সংসার, জনসেবা আর পড়ালেখা- এই তিনে সাফলতা পেতে নিরলস পরিশ্রম করতে থাকেন আদুরী। প্রবাসে থাকা স্বামীর অনুপ্রেরণা তাকে অন্যরকম সাহসী করে তোলে।
অবশেষে কঠোর অধ্যবসায় ও প্রবল ইচ্ছাশক্তি নিয়ে ৩২ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন আদুরী বেগম। বাল্যকালে বিয়ের পিঁড়িতে বসে বিকিয়ে দেওয়া অধরা স্বপ্নটাও এবার যেন পূর্ণতা পেল তার জীবনে। কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন দুই কন্যা সন্তানের মা আদুরী।
পরীক্ষার খাতায় সফলতার এই অর্জনের আগে জনসেবায় মন কাড়েন অদম্য এই নারী। তিনি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য। মালয়েশিয়া প্রবাসী স্বামী সৈয়দ আলীর অনুপ্রেরণায় আদুরী বেগম সমাজসেবার পাশাপাশি সংসার সামলে এবার এসএসসি পরীক্ষায় সাফল্য অর্জন করেছেন।
আদুরী বেগম কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ঢাকার অধীনে কাউনিয়ার ধর্ম্মেশ্বর মহেশা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রকাশিত ফলাফলে তিনি জিপিএ-৪.৫৭ অর্জন করেন। এমন সাফল্যে খুশি আদুরী ও তার পরিবারের লোকজন।
আদুরী বেগম হারাগাছ ইউনিয়নের সোনাতন গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ইউপি সদস্য হিসেবে ভোটারদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের খোঁজখবর রাখায় ‘আদুরী মেম্বার’ নামেই সবার কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তিনি। তার এসএসসি পাসের খবরে উচ্ছ্বসিত গ্রামের সাধারণ মানুষও।
ইউপি সদস্য আদুরী বেগম জানান, ছোটবেলা থেকে লেখাপড়া করার প্রবল ইচ্ছে ছিল তার। অভাবের সংসারে হিমশিম খেতে খেতে কুল হারানো মা-বাবা বাধ্য হয় তাকে অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে দেন। এ কারণে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য স্বামী বিদেশে পাড়ি জমান। পরে স্বামীর ইচ্ছায় জনসেবার বাসনা নিয়ে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আক্ষেপ তার থেকে যায়।
তিনি বলেন, সমাজে শিক্ষিত মানুষের সঙ্গে চলাফেরা, সহপাঠীদের অনেকের সাফল্য দেখে আমারও ইচ্ছে হয় পড়ালেখা করার। করোনাকালীন ভীতি দূর করে জনসেবার পাশাপাশি পড়ালেখায় মনোনিবেশ করি। মাঝে মধ্যে ছোটদের সঙ্গে ক্লাসও করেছি। সব কিছুতে আমার স্বামী অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। অবশেষে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আল্লাহর রহমতে পাস করেছি। এখন উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্নটাও পূর্ণ করতে চাই।
এ ব্যাপারে ধর্ম্মেশ্বর মহেশা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম জানান, আদুরী বেগম প্রায়ই শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত থেকে ক্লাস করেছেন। তিনি ইউপি সদস্য তা জানতাম না। তার ফলাফলে আমরা বেশ খুশি। তার স্বপ্ন এখন উচ্চশিক্ষা অর্জন করার। তিনি তার স্বপ্ন পূরণে সবার দোয়া চেয়েছেন।