নির্বাচনের আর কয়েক দিন মাত্র বাকি। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষে অর্থনীতিতে মৌলিক কোনো পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তাই সরকারকে এখন নির্বাচন-পরবর্তী আগামী তিন মাসের জন্য স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে সরকারের স্থায়িত্বের জন্য নির্বাচন-পরবর্তী অর্থনীতিতে বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ নিতেই হবে। কারণ অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতিকে পুরো পাঁচ বছর মেয়াদে টেনে নেওয়া সম্ভব হবে না। একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ঠিক না থাকলে কোনো রাজনৈতিক সরকারই টিকতে পারে না।
এখন সরকারকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায়ও বেশি জোর দিতে হবে। কোনো অবস্থায়ই রিজার্ভ ১৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামতে দেওয়া যাবে না। আর স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থার পাশাপাশি নির্বাচন-পরবর্তী সংস্কারগুলোর বিষয়ে এখনই কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি অর্থনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে সংস্কারের জন্য এখনই তৈরি করতে হবে। শুধু সংস্কারের অঙ্গীকার নয়, নিতে হবে বাস্তব পদক্ষেপ।
দেশের অর্থনীতি গত দুই দশকে যত বড় হয়েছে, তার সঙ্গে সংগতি রেখে আর্থিক খাতের যতটা বড় হওয়ার কথা ছিল, সেটি হয়নি। বরং তা আরো সংকুচিত হয়েছে। ব্যাংক খাতের ওপর সরকারের নির্ভরশীলতা বেড়েছে, কিন্তু এ খাতের গভীরতা বাড়েনি। বন্ড বাজারের কোনো উন্নতি হয়নি। শেয়ারবাজার এমনিতেই দুর্বল ছিল, এখন ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দিয়ে তাকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগে স্থবিরতা ও কর্মসংস্থানে অস্থিরতা বিরাজ করছে। চাকরির বাজার বলতে গেলে নেই।
আগে সরকারের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা কিছুটা হলেও ভালো ছিল। তাই আমরা দেখেছি, বাজেট ঘাটতি ব্যবস্থাপনার মধ্যে রাখা যেত, কিন্তু এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের খরচ বেশি হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় খাতে। প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয়ের সক্ষমতা কমে গেছে। সরকারি ব্যয় এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, যা এখন আর কমানো সম্ভব নয়। রাজস্ব আয় বাড়িয়েও তা পুরো মোকাবেলা করা যাবে না।
মূল কথা হচ্ছে, আগে সঠিক নীতিমালা করতে হবে। আইএমএফ এলো কি না, তা পরের বিষয়। আমার নিজের ঘর নিজেকে ঠিক রাখতে হবে। ঝড় আসবে, কিন্তু তা সামাল দিতে হবে। আমাদের সমস্যা বিশ্বের অন্য কারো মাথাব্যথা নয়। এর সমাধান আমাদেরই করতে হবে।
আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হতদরিদ্রের সংখ্যা ৩.২ শতাংশ ও দারিদ্র্যের হার ৬.৭ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলেছে। এ লক্ষ্যে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।