দুনিয়ার জৌলুস, আরাম-আয়েশ ও বস্তুগত প্রাচুর্য সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সবসময়ই ভারসাম্যপূর্ণ। একজন মুসলিমকে যেমন দুনিয়া ত্যাগী হতে বলা হয়নি, তেমনি দুনিয়ার প্রতি আসক্ত না হতেও বলা হয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবন ছিল এর শ্রেষ্ঠতম বাস্তব প্রতিচ্ছবি। তিনি ক্ষমতা, সম্মান ও নেতৃত্বের শীর্ষে থেকেও দুনিয়ার আরাম-আয়েশ থেকে বিরত থেকেছেন।
অনুসারীগণকে শিখিয়েন যে, আসল বাড়ি হচ্ছে পরকাল, আর পৃথিবী কেবল অস্থায়ী সফরের স্টেশনমাত্র। নিচের হাদিসটি সেই অনন্য দৃষ্টিভঙ্গিরই এক চমৎকার উপমা-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ نَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى حَصِيرٍ فَقَامَ وَقَدْ أَثَّرَ فِي جَنْبِهِ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ لَوِ اتَّخَذْنَا لَكَ وِطَاءً . فَقَالَ “ مَا لِي وَمَا لِلدُّنْيَا مَا أَنَا فِي الدُّنْيَا إِلاَّ كَرَاكِبٍ اسْتَظَلَّ تَحْتَ شَجَرَةٍ ثُمَّ رَاحَ وَتَرَكَهَا ” .
আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো একসময় খেজুর পাতার মাদুরে শুয়েছিলেন। তিনি ঘুম হতে জাগ্রত হয়ে দাঁড়ালে দেখা গেল তার গায়ে মাদুরের দাগ পড়ে গেছে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমরা আপনার জন্য যদি একটি নরম বিছানার (তোষক) ব্যবস্থা করতাম।
তিনি বললেন: দুনিয়ার সাথে আমার কি সম্পর্ক দুনিয়াতে আমি এমন একজন পথচারী মুসাফির ছাড়া তো আর কিছুই নই, যে একটি গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিল, তারপর তা ছেড়ে দিয়ে গন্তব্যের দিকে চলে গেল। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৭)
হাদিসের মূল শিক্ষা
দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি (জুহদ): মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখিয়েছেন; আরাম-আয়েশ, বিলাসিতা বা অতিরিক্ত ভোগবিলাস জীবনের উদ্দেশ্য নয়। দুনিয়া ক্ষণিকের সফর মাত্র। কাজেই মুমিন বান্দা পরকালমুখী দৃষ্টি লালন করবে।কারণ তার আসল গন্তব্য হচ্ছে আখিরাত। পৃথিবী সাময়িক বিরতি নেয়ার জায়গা মাত্র; স্থায়ী আশ্রয় নয়।সরলতা ও নম্র জীবনযাপন: নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষমতার শীর্ষে থেকেও মাদুরে ঘুমাতেন, আরামদায়ক বিছানা গ্রহণ করেননি। এর মাধ্যমে তিনি শিখিয়েছেন যে, সরলতা ইবাদতের অংশ।
এ জাতীয় আরো খবর..