শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:০৬ অপরাহ্ন

মৌসুমের শেষে উৎপাদন এলাকায় বাড়তি ঝাঁজ পেঁয়াজে

অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট টাইম: বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৫
মৌসুমের শেষের দিকে উৎপাদন এলাকা পাবনায় বেড়েছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৪০ টাকা। কিছু সবজির দরও উর্ধ্বমুখী। মাঝের অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিতে সরবরাহ কমায় কেজিতে দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা।

ফলে বাজারের এমন অস্থিরতা আবারও অস্থির করে তুলছে ভোক্তাদের। 

তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরে বাইরের দেশের আমদানি পেঁয়াজ নেই পাবনার বাজারে। তবে দাম অনেকটাই স্থিতিশীল ছিলো। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজের দর ছিলো ৬০-৭০ টাকা।

তবে আবার নতুন করে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। কেজিতে ৪০ টাকা দাম বেড়ে এখন বিক্র হচ্ছে ১০৫-১১০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনের সবচেয়ে বড় অংশ উৎপাদন হয় পাবনায়। কয়েক সপ্তাহ ধরে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ প্রায় শেষের দিকে।
আবার পেঁয়াজের মৌসুমও শেষ। ফলে কৃষকের ঘরে থাকা পেঁয়াজের মজুত একেবারেই কমে গেছে। এতে বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়তি। 

বড় বাজারের পেয়াজের দোকানি জনি বলেন, সপ্তাহ খানেক আগে পেঁয়াজের বাজার ঠিকই ছিলো। গত ৪-৫ দিন আগে হুট করেই কেজিতে ২০ টাকার মত বেড়ে ৯০ টাকা হয়।

এরপর ৫-১০ টাকা করে বাড়তে বাড়তে আজ ১১০ টাকায় ঠেকেছে। এখন চাষির ঘরে পেঁয়াজ নাই। মুড়িকাটা রোপণ শেষ। দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে। এপর্যন্ত বাজার এরকম বাড়তিই থাকবে। হয়তো আরো ৫-১০ টাকা বাড়তে পারে, এর বেশি না। 

আরেক দোকানি হুরমত শেখ বলেন, এখন মাসের প্রথম সপ্তাহ চলে। সবাই মাসিক বাজার করতেছেন। এজন্য পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। কিন্ত বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। তাই দাম বাড়তি। আমরা যেরকম কিনি তেমন বিক্রি করি। আমাদের দাম বাড়ানো বা কমানোর ক্ষমতা নাই। এগুলো বড় ব্যবসায়ীরা দেখে থাকে।

তবে শুধু সরবরাহ ঘাটতিতে পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়টি মানতে নারাজ ক্রেতারা। তারা বলছেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগানো শুরু হয়েছে ৩-৪ সপ্তাহ আগে। ইতোমধ্যে প্রায় লাগানো শেষ। তাহলে হুট করে তিন থেকে চারদিনের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক বিষয় নয়। তাদের অভিযোগ, কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ আসলেই কমে গেছে। তবে বাধাই বা মজুত ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে এখনো প্রচুর পেঁয়াজ রয়েছে। তারা প্রতিবছর এই সময়টাতে পেঁয়াজের সংকট দেখিয়ে অতিরিক্ত দাম বাড়িয়ে দেন। বাজারে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের নজরদারি বাড়ানো উচিত বলে দাবি তাদের।

ক্রেতা সবুজ হান্নান বলেন, প্রথম যখন কেজিতে ৫ টাকা বাড়লো তখন বাসা থেকে বেশি করে পেঁয়াজ কিনে রাখতে বলেছিলো। ভাবলাম খুব একটা বাড়বে না হয়তো। কিন্তু আমার প্রেডিকশন ভুল হলো। কেজিতে ৪০ টাকা বাড়তি। এখন তো পেঁয়াজ কেনাই কঠিন হয়ে গেছে। ৩ কেজির পরিবর্তে আপাতত এক কেজি নিলাম।

আরেক ক্রেতা রাজিব হোসেন বলেন, মাসিক বাজার করতে এসেছি। পেঁয়াজের যে ঝাঁজ দেখছি তাতে কতটুকু কেমনে নিবো সেটাই ভাবতেছি। প্রতিবছর এসময় এরকম অতিরিক্ত দাম বাড়ানো হয়। মৌসুমের শুরুতে কৃষকেরা দাম পায় না। অথচ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পেঁয়াজ আটকে রেখে এসময় বেশি দামে ছাড়ে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ না করলে দাম আরো বাড়বে।

সরেজমিনে গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার সকালে পাবনা শহরের বড় বাজার, মাসুম বাজার ও লাইব্রেরি বাজার সহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে ৭০ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা থেকে ১১০ টাকায়। একইভাবে বেড়েছে শীতকালীনসহ কিছু সবজির দামও। প্রতিকেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকার শিমের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। একইভাবে দাম বেড়ে ৩৫ টাকার বেগুন ৫০ টাকা, ৩৫ টাকার ঢেঁড়শ ৫০ টাকা ও ১৫ টাকার আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮ টাকায়। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে অন্যান্য সবজির দাম। কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা, পটল ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা, করলা ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা, কাঁচকলা ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা, বটবটি ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা, মূলা ১০ টাকা থেকে ১২ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকায়।

বড় বাজারের বিক্রেতা নজরুল বলেন, সবজির দাম খুব একটা বাড়েনি। গত সপ্তাহ ও এ সপ্তাহ বাজার প্রায় একই। শিম, আলু, বেগুনসহ হাতেগোনা কয়েকটির দাম কিছুটা বেড়েছে। মাঝে কিছুদিন বৃষ্টি হওয়ায় এসব সবজি বাজারে একটু কম আসছে। জন্য এ দর বাড়তি। তবে সপ্তাহখানেকের মধ্যে সবজির দাম অনেক কমে যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102