বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন

ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইতালিতে বিক্ষোভ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত ৬০

অনলাইন ডেক্স রির্পোট
  • আপডেট টাইম: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানাতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এলে ইতালিতে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গত সোমবার ইতালির বিভিন্ন শহরে এই সংঘর্ষ হয়।শ্রমিক ইউনিয়নের সমন্বয়ে আয়োজিত দেশব্যাপী এই আন্দোলনে শিক্ষক, বন্দরকর্মী ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। সবচেয়ে বেশি মানুষ জড়ো হয় মিলান ও রোমে।মিলানের কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনের কাছে উত্তেজনা চরমে পৌঁছালে প্রায় ৬০ জন পুলিশ আহত হয়।ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি মিলানের ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন।তিনি সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলের অভিযানের সমালোচনা করলেও এখনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার পথে হাঁটেননি। অন্যদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।তিনি বলেন, ‘এটি একটি অপরিহার্য পদক্ষেপ।’ যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াওফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এ ছাড়া জাতিসংঘ অধিবেশনের প্রাক্কালে নিউইয়র্কে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে বেলজিয়াম, মাল্টা, অ্যান্ডোরা, মোনাকো ও লুক্সেমবার্গ। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিন স্বীকৃতির ধারায় আরো ৫টি দেশ যুক্ত হলো।প্যারিস বলেছে, তাদের এই উদ্যোগকে বেলজিয়াম, মাল্টা ও লুক্সেমবার্গসহ কয়েকটি দেশ সমর্থন করেছে। তবে জি–৭-এর অন্যান্য প্রধান ইউরোপীয় শক্তি ইতালি ও জার্মানি এখনো এই পথে যায়নি। ইসরায়েল ম্যাখোঁর পদক্ষেপকে ‘হামাসের পুরস্কার’ বলে সমালোচনা করেছে। দেশটির জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত একে ‘সার্কাস’ বলে আখ্যা দেন।প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেছেন, ‘জর্দান নদীর পশ্চিমে কোনো ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র হবে না। প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগও বলেছেন, এ ধরনের স্বীকৃতি ‘অন্ধকার শক্তিকে উৎসাহিত করবে।’ ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো বলেছেন, এই স্বীকৃতি হামাসের প্রতি ‘সুস্পষ্ট প্রত্যাখ্যান’ এবং ম্যাখোঁর এই ঘোষণা ফ্রান্সের জন্য ‘বড় কূটনৈতিক সাফল্য।’ইতালির সরকার সম্প্রতি বলেছে, ‘যে রাষ্ট্র এখনো বাস্তবে নেই তাকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রতিকূল হতে পারে।’ বিরোধীরা অভিযোগ করছে, প্রধানমন্ত্রী মেলোনি সংসদে গিয়ে ইসরায়েল ও গাজা বিষয়ে তার অবস্থান পরিষ্কার করেননি।ইতালির বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা এলি শ্লাইন অভিযোগ করেন, রবিবার যখন যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী মেলোনি জাতীয় টেলিভিশনে তার প্রিয় খাবারের সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন।ইতালিতে সোমবারের বিক্ষোভে বন্দর, রেল, মেট্রোসহ বিভিন্ন পরিবহন ব্যবস্থা অচল হয়ে যায়। লিভোর্নো ও জেনোয়ার বড় বন্দরগুলোতেও কার্যক্রম বন্ধ থাকে। তুরিন ও বোলোনিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুম অবরোধ করে। ফ্লোরেন্স, বারি ও সিসিলির পালেরমোতেও বিক্ষোভ হয়। রোমের টারমিনি স্টেশনে প্রায় ২০ হাজার বিক্ষোভকারী সমবেত হয়।মিলানের কেন্দ্রীয় স্টেশনের বাইরে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিক্ষোভকারীরা মার্কিন পতাকা পোড়ালে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কালো পোশাকধারী একটি দল পুলিশের দিকে পাথর, ধোঁয়ার বোমা ও লোহার রড নিক্ষেপ করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। বোলোনিয়ায় প্রধান রিং রোড অবরোধ করলে পুলিশ জলকামান ও টিয়ার গ্যাস ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে।মিলানের মেয়র জিউসেপ্পে সালা বলেছেন, এই ভাঙচুর ‘অন্যায় এবং গাজা ইস্যুর জন্য মোটেই সহায়ক নয়।’ প্রধানমন্ত্রী মেলোনি বলেন, ‘এই সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে সংহতির কোনো সম্পর্ক নেই এবং এটি গাজার মানুষের জীবনে কিছু পরিবর্তন করবে না, বরং ইতালির নাগরিকদের জন্য বাস্তব ক্ষতি ডেকে আনবে।’রবিবার রাতেই প্যারিসের আইফেল টাওয়ারে ফিলিস্তিনের ও ইসরায়েলি পতাকা প্রদর্শিত হয়। ফ্রান্সের বিভিন্ন পৌরসভায়ও সোমবার ফিলিস্তিনি পতাকা ওড়ানো হয়, যদিও সরকার স্থানীয় প্রশাসনকে নিরপেক্ষ থাকতে বলেছিল। ম্যাখোঁর এই ঘোষণা তার দেশের ডানপন্থী রাজনীতিকদের সমালোচনার মুখে পড়েছে।ন্যাশনাল র‌্যালির জর্দান বারডেলা বলেছেন, ‘হামাস এখনো ইসরায়েলি জিম্মিদের ধরে রেখেছে, আর এই পদক্ষেপ ৭ অক্টোবরের ভয়াবহ হামলাকে পুরস্কৃত করার সমান।’ ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন গত সপ্তাহে গাজায় প্রতিদিনের ভয়াবহ ঘটনার অবসান চেয়ে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান।জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্সও ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের সমালোচনা করছেন। তবে দেশটির সরকার বলেছে, এখনই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির প্রশ্ন আসছে না। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ওয়াডেফুল সোমবার নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে বলেন, ‘আমাদের জন্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ, কিন্তু এই প্রক্রিয়া এখনই শুরু হওয়া দরকার।’

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102