এ ছাড়া পিআর ছাড়া বাকি চার দাবিতে এনসিপি, এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদ পৃথক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামবে বলে জানা গেছে। যদিও দলগুলো কাগজে কলমে কোনো জোটের কথা বলছে না, তবে তারা বিএনপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে কি না- জনমনে সেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আলোচনার টেবিলে যখন সমাধান হচ্ছে না, তখন দরকষাকষির টেবিলে আন্দোলনের চাপ হয়তো বাড়তি সুবিধা দিতে পারে জামায়াত ও সমমনা দলগুলোকে। জামায়াতসহ দলগুলোর বক্তব্য- তাদের আন্দোলন কারও বিরুদ্ধে নয়। জনগণের পক্ষে তারা আন্দোলন করছে। তারা এই সরকারের আমলে জুলাই সনদ বা সংস্কারের আইনি ভিত্তি চান।পর্যবেক্ষণে বিএনপি : জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির দাবিতে জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিতে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে বিএনপি। এই কর্মসূচির ফলে দেশের রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা করছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। তারা বলছেন, বিএনপি যদি পাল্টা কর্মসূচি দেয়, তাহলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আবার অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। দেখা দিতে পারে সংঘাত। বিএনপির দায়িত্বশীলরা বলছেন, জামায়াত এবং অন্যান্য দলগুলোর আন্দোলন দৃশ্যত সরকারের উদ্দেশ্যে হলেও, এর মূল বিরোধ কিংবা দ্বন্দ্ব মূলত বিএনপির সঙ্গে। কারণ জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন, পিআর পদ্ধতিতে ভোট, জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার মতো বিষয়গুলোতে ভিন্নমত আছে বিএনপির। তারা বলছেন, ঐকমত্য কমিশনে যখন জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা চলছে, তখন রাজপথে আন্দোলনের ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে। কেউ কেউ বলছেন, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একজোট হয়ে মূলত বিএনপির বিপরীতে একটা বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেদের দৃশ্যমান করতে চাইছে। লক্ষ্য আন্দোলনের মাধ্যমে একটা রাজনৈতিক জোট গড়া- যার টার্গেট বিএনপি। তারা বলছেন, দেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপি এ মুহূর্তে দেশে এমন কোনো উত্তপ্ত পরিস্থিতি চায় না, যা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবকিছু ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তবে দলটির সন্দেহ, ইস্যু তৈরি করে একটি মহল দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। তাই আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যে কোনো পরিস্থিতি সর্বোচ্চ ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করবে বিএনপি। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিএনপিও নির্বাচনকে উৎসবমুখর ও ইতিহাসের সেরা নির্বাচন হিসেবে দেখতে চায়।তবে রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে রাজপথে সংঘাতের সূচনা হতে পারে কি না, সে আশঙ্কাও করছে বিনএনপি। তারা বলছেন, রাজনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন পক্ষ থেকে নানান ধরনের আন্দোলন হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে আন্দোলনে নামার উদ্যোগ এবারই প্রথম। পরিবর্তিত অবস্থায় ঐক্য ধরে রাখতে অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোকে আগে আলোচনার মাধ্যমে খুঁজতে হবে সমাধানের পথ। একে অন্যকে ছাড় না দিলে সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এজন্য সব পক্ষকে সংযত ও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। অন্যথায় বিভক্তি-বিভাজনের এই সুযোগ নেবে পরাজিত শক্তি।