লন্ডনভিত্তিক খ্যাতনামা দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস (এফটি) প্রকাশ করেছে আলোচিত তথ্যচিত্র “বাংলাদেশের হারানো বিলিয়ন: চোখের সামনেই চুরি”। এতে দাবি করা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে।
তথ্যচিত্রে বলা হয়, পাচার হওয়া অর্থের বড় অংশ যুক্তরাজ্যে গেছে। সেখানে ইতোমধ্যে প্রায় ৩৫০টি সম্পত্তি জব্দ করেছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA)। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে ৩০০-র বেশি সম্পত্তি রয়েছে বলেও জানানো হয়।
প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার পরিবার ও ঘনিষ্ঠদের সম্পদ অর্জনের বিষয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। তাঁর ভাগ্নি ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে দুর্নীতি ও অবকাঠামো প্রকল্পের অর্থ অপব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এফটির তথ্যানুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে গড়ে ১৬০০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। এর মধ্যে একাই এস আলম গ্রুপ পাচার করেছে প্রায় ১০০০ কোটি ডলার।
তথ্যচিত্রে আরও অভিযোগ করা হয়, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এর সহযোগিতায় ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ ও জোরপূর্বক শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠরা বিপুল সম্পদ হাতিয়ে নেয়।
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোশতাক খান মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশে দুর্নীতি প্রকাশ্যেই হতো, কিন্তু ভয়ের কারণে কেউ মুখ খুলত না।” ব্রিটিশ সংস্থা স্পটলাইট অন করাপশন জানায়, দরিদ্র দেশের একজন মন্ত্রীর শত শত সম্পত্তি কেনা বিস্ময়কর।
সম্পদ ফেরত আনা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা স্বীকার করেছেন, আন্তর্জাতিক আইনি জটিলতা ও লবিস্টদের প্রভাবের কারণে এটি একটি কঠিন কাজ। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “বিদেশি সরকারের সহযোগিতা ছাড়া পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব নয়।”
এফটির দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরোপ্রধান মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশের বিপ্লব ইতিহাসের টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে, তবে ঝুঁকি রয়ে গেছে—আবারও একক রাজনৈতিক শক্তির হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হতে পারে।”
উপসংহার:
তথ্যচিত্রে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—শেখ হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতি ও অর্থপাচার “চোখের সামনেই” ঘটেছে। এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, বিদেশে পাচার হওয়া বিপুল অর্থ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে কিনা, এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতরা ভবিষ্যতেও রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করবে কিনা।