বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:২১ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:

শান্তি ও সমৃদ্ধির সমাজ গঠনে নববী শিক্ষা

অনলাইন ডেক্স রির্পোট
  • আপডেট টাইম: বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
মানুষের জীবনযাত্রা যদি নিয়ন্ত্রিত না হয়, তবে তা ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়। আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁর হাদিসে আমাদের সামনে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন, যা মানবসমাজের কল্যাণে অপরিহার্য। যাতে কিছু বিষয় তিনি একেবারে হারাম বলে ঘোষণা করেছেন, আর কিছু বিষয়কে অপছন্দ করেছেন। এই শিক্ষাগুলো মানুষের পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় করে, সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে এবং ব্যক্তিজীবনে সংযম আনে-

عَنِ الْمُغِيرَةِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَيْكُمْ عُقُوقَ الأُمَّهَاتِ، وَمَنْعَ وَهَاتِ، وَوَأْدَ الْبَنَاتِ، وَكَرِهَ لَكُمْ قِيلَ وَقَالَ، وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ، وَإِضَاعَةَ الْمَالِ ‏”‏‏.

মুগীরা ইবনু শু’বা (রা.) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মা-বাপের নাফরমানী করা, প্রাপকের প্রাপ্য আটক রাখা, যে জিনিস গ্রহণ করা তোমাদের জন্য ঠিক নয় তা তলব করা এবং কন্যা সন্তানকে জীবিত কবর দেয়া। আর তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেছেন গল্প-গুজব করা, অতিরিক্ত প্রশ্ন করা ও সম্পদ অপচয় করা। (বুখারি, হাদিস : ৫৯৭৫)

হাদিসের শিক্ষা

এই সংক্ষিপ্ত অথচ গভীর হাদিসে মানবজীবনের জন্য এমন এক ভারসাম্যপূর্ণ নীতি নির্ধারণ করা হয়েছে, যা সমাজে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার মূলভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।প্রথমেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করলেন মা-বাবার নাফরমানী থেকে।আল্লাহর আনুগত্যের পরেই সন্তানের সর্বোচ্চ দায়িত্ব তাদের অধিকার আদায়। তাদের প্রতি অবাধ্যতা শুধু পারিবারিক বন্ধন নয়, আখিরাতের মুক্তিকেও নষ্ট করে দেয়।এরপর এসেছে অন্যের হক গোপন রাখা বা আটকে দেওয়া। শ্রমিকের মজুরি হোক, উত্তরাধিকারীদের সম্পদ হোক কিংবা দেনাদারের প্রাপ্য—সবকিছু যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়া ঈমানের দাবি।অন্যের প্রাপ্য আটকে রাখা সমাজে অবিচার ও বৈষম্যের জন্ম দেয়।তৃতীয়ত, অন্যায়ের মাধ্যমে কিছু দাবি করা অর্থাৎ যা হালাল নয় তা পাওয়ার চেষ্টা করা ইসলামে কঠোরভাবে নিন্দিত। ঘুষ, সুদ বা প্রতারণা এ সবই এর অন্তর্ভুক্ত।চতুর্থত, ইসলামের আগমন মানবতার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। কন্যা সন্তানকে জীবিত কবর দেওয়ার মতো বর্বর রীতি ইসলাম চিরতরে সমাধিস্থ করেছে।বরং কন্যাকে সম্মান, শিক্ষা ও অধিকার প্রদানকে ইসলাম ন্যায্যতা দিয়েছে।এরপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি বিষয়কে অপছন্দ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

অপ্রয়োজনীয় গল্পগুজব—যা গীবত, মিথ্যা ও সময় অপচয়ের দরজা খোলে।

অতিরিক্ত ও অকারণ প্রশ্ন—যা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, অথচ ইসলামের মূল শিক্ষা হলো সহজ ও প্রয়োগযোগ্য জীবনব্যবস্থা।

সম্পদ অপচয়—যা আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ইসলাম ব্যয়ের ক্ষেত্রে সংযম ও ভারসাম্যের শিক্ষা দিয়েছে।

এই হাদিস কেবল তৎকালীন আরব সমাজের জন্য নয়, বরং চিরন্তন মানবতার জন্য এক নির্দেশিকা। পরিবারে পিতা-মাতার সম্মান প্রতিষ্ঠা ছাড়া শান্তি আসবে না। অর্থনীতিতে ন্যায়বিচার ও হক আদায় ছাড়া সমৃদ্ধি আসবে না। সমাজে নারীর সম্মান ও অধিকার রক্ষা ছাড়া মানবিকতা পূর্ণ হবে না।

আর ব্যক্তিজীবনে অপচয় থেকে বিরত থাকা, অর্থহীন কথা ও কৌতূহল এড়িয়ে চলা ছাড়া মানুষ কখনো জ্ঞানের প্রকৃত আলো পাবে না।

এ হাদিসে লুকিয়ে আছে জীবনব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা। পরিবার, সমাজ, অর্থনীতি এবং আধ্যাত্মিকতা—সব ক্ষেত্রেই ভারসাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা এই শিক্ষার মূল বার্তা। তাই মুসলিম উম্মাহর করণীয় হলো—যা আল্লাহ হারাম করেছেন তা থেকে বিরত থাকা, আর যা অপছন্দ করেছেন তা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা। এর মধ্য দিয়েই গড়ে উঠবে শান্তিপূর্ণ পরিবার, ন্যায়নিষ্ঠ সমাজ ও পরিপূর্ণ মানবতা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102