বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১৭ পূর্বাহ্ন

ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা, আলোচনায় পাকিস্তানের সামরিক প্রধান

অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট টাইম: বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
কয়েক দশকের মধ্যে পাকিস্তানের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক প্রধান নতুন ক্ষমতা পাওয়ার পর সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। কারণ ওয়াশিংটন গাজা ‘স্থিতিশীলতা বাহিনী’তে পাকিস্তানি সেনা প্রেরণের জন্য ইসলামাবাদকে চাপ দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের ভেতরে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির আগামী সপ্তাহে রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে ওয়াশিংটনে যেতে পারেন।গত ছয় মাসের মধ্যে এটি হবে তাদের তৃতীয় বৈঠক। রয়টার্সকে দুটি সূত্র জানিয়েছে, এই বৈঠকে মূল আলোচ্য বিষয় হতে পারে গাজায় প্রস্তাবিত সেই বাহিনীতে পাকিস্তানের ভূমিকা। সূত্রগুলোর একজন পাকিস্তানের অর্থনৈতিক কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা একজন জেনারেল।ট্রাম্পের ২০-দফা গাজা পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বোমাবর্ষণে ধ্বংস হওয়া ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের পুনর্গঠন এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য একটি রূপান্তরকালীন সময়কাল থাকবে।তা তত্ত্বাবধানের জন্য মুসলিম দেশগুলোকে একটি যৌথ বাহিনী (স্থিতিশীলতা বাহিনী) গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে।তবে অনেক দেশ এই পরিকল্পনা নিয়ে সতর্ক। তাদের আশঙ্কা, গাজার ইসলামপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস-কে সামরিকভাবে মোকাবিলা করতে গেলে, তারা সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে। এতে নিজেদের দেশের ফিলিস্তিনপন্থী ও ইসরায়েলবিরোধী জনগণও ক্ষুব্ধ হতে পারে।এদিকে, বহু বছর ধরে ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের মধ্যে যে অবিশ্বাস ছিল, তা কমানোর চেষ্টা করছেন ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। জুন মাসে এর একটি দৃষ্টান্ত দেখা যায়। তখন তাকে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এটিই প্রথমবার, যখন কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট বেসামরিক কর্মকর্তাদের ছাড়া একা পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে আতিথ্য দেন।ওয়াশিংটন-ভিত্তিক আটলান্টিক কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়ার সিনিয়র ফেলো মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘গাজা স্থিতিশীলতা বাহিনীতে অবদান না রাখলে ট্রাম্পকে বিরক্ত করতে পারে, যা পাকিস্তানের জন্য কোনো ছোট বিষয় নয়। কারণ, পাকিস্তান তার (ট্রাম্প) অনুগ্রহে থাকতে আগ্রহী, মূলত মার্কিন বিনিয়োগ এবং নিরাপত্তা সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য।’বিশ্বের একমাত্র মুসলিম পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যুদ্ধে দক্ষ। লেখক ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘পাকিস্তানের সামরিক শক্তি যত বেশি, ততই ফিল্ড মার্শাল মুনিরের ওপর তার ক্ষমতা দেখানোর ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার চাপ বেড়ে যাচ্ছে।’পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী, পররাষ্ট্র দপ্তর এবং তথ্য মন্ত্রণালয় রয়টার্সের প্রশ্নের জবাব দেয়নি। হোয়াইট হাউসও মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার গত মাসে বলেছিলেন, ইসলামাবাদ শান্তিরক্ষার জন্য সেনা প্রেরণের কথা বিবেচনা করতে পারে; কিন্তু হামাসকে নিরস্ত্র করা ‘আমাদের কাজ নয়।’ এই মাসের শুরুতে সেনাপ্রধান মুনিরকে পাকিস্তানের বিমানবাহিনী এবং নৌবাহিনীর প্রধান হিসেবেও নিয়োগ করা হয়েছে। তার মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তিনি ফিল্ড মার্শাল পদটি আজীবন ধরে রাখবেন। এ ছাড়া, তিনি যেকোনো ফৌজদারি মামলায় আজীবন দায়মুক্ত থাকবেন।বিশ্লেষক কুগেলম্যান বলেন, ‘পাকিস্তানের খুব কম মানুষই মুনিরের মতো ঝুঁকি নিতে পারেন। তার অসীম ক্ষমতা আছে, যা এখন সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত।’

 ঝুঁকি

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পাকিস্তানের সামরিক প্রধান মুনির ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, জর্দান, মিসর এবং কাতারের মতো দেশের সামরিক ও বেসামরিক নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন।

সেনাবাহিনী বলেছে, গাজা বাহিনীর বিষয়ে মুনির পরামর্শ দিচ্ছেন, যেটা লেখক আয়েশা সিদ্দিকাও উল্লেখ করেছেন। দেশটিতে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, মার্কিন-সমর্থিত এই পরিকল্পনার অধীনে গাজায় পাকিস্তানি সেনারা থাকলে দেশি ইসলামপন্থী দলগুলো আবার বিক্ষোভ শুরু করতে পারে। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের তীব্র বিরোধী। ইসলামপন্থীরা রাস্তায় লাখো মানুষ জড়ো করার ক্ষমতা রাখে।

পাকিস্তানের কঠোর ব্লাসফেমি আইন রক্ষা করার জন্য অক্টোবরে একটি শক্তিশালী ও সহিংস ইসরায়েল-বিরোধী ইসলামপন্থী দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। প্রশাসন তাদের নেতা ও ১ হাজার ৫০০-এর বেশি সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে এবং দলের সম্পদ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। যদিও দলটি নিষিদ্ধ, তাদের আদর্শ এখনো জেগে আছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল সেনা প্রধান আসিম মুনিরের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে পারে।

সিঙ্গাপুরের এস. রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো আব্দুল বাসিত বলেছেন, গাজা বাহিনী মাঠে নামলে যদি পরিস্থিতি খারাপ হয়, তা দ্রুত বড় সমস্যার সৃষ্টি করবে। তিনি বলেন, ‘মানুষ বলবে আসিম মুনির ইসরায়েলের নির্দেশ পালন করছেন—এটি অপ্রত্যাশিত কিছু হবে না।’

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102