গাজীপুরের কাপাসিয়ায় মানুষের সঙ্গে বন্যপ্রাণী শিয়ালের গড়ে উঠেছে ব্যতিক্রমী বন্ধুত্ব। অদ্ভুত শোনালেও, কাপাসিয়া সদর ইউনিয়নের সু্র্য্যনারায়নপুর কাওলারটেক গ্রামের দিনমজুর গিয়াস উদ্দিন (৪০) প্রাণীপ্রেম থেকেই শুরু করেন এই অদ্ভুত শখের পালন।এই অনন্য উদ্যোগ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই বলছেন— মানুষ যদি ভালোবাসা দেয়, বন্য হিংস্র প্রাণীও হতে পারে মানুষের বন্ধু।গিয়াস উদ্দিন জানান, বছর খানেক আগে বনে আহত অবস্থায় দুই মাস বয়সী একটি শিয়ালছানা দেখতে পান তিনি। সেটিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং খাবার পানি দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। এরপর থেকেই শিয়ালটিকে তিনি নিজের পালিত প্রাণীর সঙ্গে সহাবস্থানে রাখতে শুরু করেন।তিনি বলেন, প্রথমে শিয়ালটি খুব ভয় পেত, কিন্তু এখন একদম অভ্যস্ত হয়ে গেছে।মোরগ, ছাগলের মতোই খাবার দিই—মাছ, মাংস যা পায় তাই খায়। এমনকি রান্না করা তরকারি ভাত দিয়ে মেখে দিলেও সে খায়। এ ছাড়া খাবার হিসেবে তাকে দেওয়া হয় বিস্কুট, পাউরুটি, আটার রুটিসহ নানা কিছু।শিয়ালটি দিন ও রাতের বেশির ভাগ সময় গিয়াসের ঘর ও উঠানে থাকে।মাঝেমধ্যে বাড়ির পাশের জঙ্গলে চলে যায়। তখন ‘লালু’ বলে ডাকলে দৌড়ে চলে আসে। স্থানীয়রা প্রথমে অবাক হলেও এখন নিয়মিত শিয়ালটি দেখতে আসেন অনেকে। বাড়িতে ভিড় জমায় এই ‘পোষা শিয়াল’ দেখার জন্য।গিয়াস উদ্দিন বলেন, মানুষকে খাওয়ালে পরাইলে একটু ভুল করলে সেই মানুষ রাগ করে।কিন্তু এই শিয়াল আমার সঙ্গে কখনো রাগ করে না। শিয়ালের সঙ্গে আমার একটা মায়া জন্মে গেছে। তবে তার খাবারের জন্য কিছুটা খরচ হয়। কেউ গরু ছাগল জবাই করলে সেখান থেকে অল্প মাংস এবং মাঝে মাঝে মাছ কিনে আনতে হয়। মানুষ আমাকে অনেক সময় পাগল বলে, আসলে আমি পাগল না, আমি দিনমজুর। মানুষের বাড়িতে কাজ করে খাই। সে আমার ছাগল, মোরগ, গরুর সঙ্গে হাঁটাহাঁটি করে। গরু-ছাগলের ঘাস খাওয়া শেষ হলে শিয়াল তাদের সন্ধ্যার আগে বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়ির মোরগগুলো দেখাশোনা করে রাখে। গভীর জঙ্গলের ভিতরে আমার বাড়ি। অন্য কোনো প্রাণী যাতে আক্রমণ করতে না পারে সেই খেয়ালও রাখে সে। প্রতিবেশীর কোনো ক্ষতি করে না।