শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৪০ পূর্বাহ্ন

একমাত্র বিদেশি ঘাঁটি থেকে চুপিসারে সেনা প্রত্যাহার ভারতের

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম: রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫
মধ্য এশিয়ায় ভারতের একমাত্র বিদেশি পূর্ণাঙ্গ বিমানঘাঁটি থেকে নিজেদের সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে নিয়েছে নয়াদিল্লি। তাজিকিস্তানের আয়নি বিমানঘাঁটি থেকে নিজেদের সেনা প্রত্যাহারের পর ওই অঞ্চলে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, ২০২২ সালেই সৈন্য প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তবে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে গত মাসে।রাজধানী দুশানবের কাছাকাছি অবস্থিত আয়নি বিমানঘাঁটিটি সোভিয়েত আমলে নির্মিত হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর তা অচল হয়ে পড়ে। ২০০২ সালে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় ঘাঁটিটি সংস্কারের দায়িত্ব নেয় ভারত।ভারতের বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (বিআরও) প্রায় ৮ কোটি ডলার ব্যয়ে ঘাঁটিটি আধুনিকায়ন করে।৩২০০ মিটার দীর্ঘ রানওয়ে, বিমান হ্যাঙ্গার, জ্বালানি ডিপো ও এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা গড়ে তোলা হয় সেখানে। ফলে যুদ্ধবিমান ও ভারী পরিবহন বিমানের জন্য এটি ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠে।ওয়াখান করিডর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঘাঁটিটি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর ও চীনের শিনজিয়াং প্রদেশের কাছাকাছি হওয়ায়, অঞ্চলটির ভূরাজনীতিতে এটি ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুবিধা এনে দিয়েছিল।সর্বোচ্চ কার্যক্রম চলাকালীন সেখানে প্রায় ২০০ ভারতীয় সেনা সদস্য অবস্থান করতেন।সুখোই-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমানও মোতায়েন ছিল ঘাঁটিটিতে।ঘাঁটিটি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে সরকারি ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, তাজিকিস্তানের সঙ্গে সীমিত সহযোগিতার অংশ হিসেবে আয়নি ঘাঁটিতে ভারতের উপস্থিতি ছিল, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল সংস্কার ও অবকাঠামো উন্নয়ন। সেই চুক্তির মেয়াদ ২০২২ সালে শেষ হয়। এরপর ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘাঁটিটি তাজিক সরকারের কাছে হস্তান্তর করে।তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলোর দাবি, তাজিকিস্তান রাশিয়া ও চীনের চাপের মুখে ছিল।মধ্য এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারে সক্রিয় এই দুই দেশ চুক্তি নবায়নে অনীহা দেখায়। ফলে ভারত ধীরে ধীরে কর্মী ও সরঞ্জাম সরিয়ে নেয়, আর পুরো প্রক্রিয়াটি চলে অত্যন্ত নীরবে।ভারতের আঞ্চলিক প্রভাব কমবে?বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আয়নি ঘাঁটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মধ্য এশিয়ায় ভারতের কৌশলগত প্রভাব কমে যাবে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও চীনের সংযোগস্থলে অবস্থিত এই ঘাঁটি ভারতের জন্য ছিল নজরদারির এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।তাদের মতে, ঘাঁটি হারানো মানে ওই অঞ্চলে চীন ও রাশিয়ার বাড়তি প্রভাবের মুখে ভারতের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়া। একই সঙ্গে এটি প্রমাণ করে যে, ভারত এখনো প্রতিবেশী অঞ্চল ছাড়িয়ে দীর্ঘমেয়াদি সামরিক উপস্থিতি ধরে রাখতে পারেনি।অন্য কোথাও ঘাঁটি আছে?বর্তমানে ভারতের কোনো পূর্ণাঙ্গ বিদেশি সামরিক ঘাঁটি নেই। তবে ২০২৪ সালে মরিশাসের আগালেগা দ্বীপে ভারত ও মরিশাস যৌথভাবে একটি আধুনিক বিমানবন্দর ও নৌ জেটি স্থাপন করেছে, যা ভারত মহাসাগরে নজরদারির সক্ষমতা বাড়াচ্ছে।এই স্থাপনা থেকে ভারতের নৌবাহিনীর পি-৮আই সামুদ্রিক নজরদারি বিমান ও ডর্নিয়ার বিমানের কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে। এ ছাড়া ভুটানে ভারতীয় সামরিক প্রশিক্ষণ দল রয়্যাল আর্মি ও রয়্যাল বডিগার্ড বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।অতীতে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় বাংলাদেশে ও ১৯৮৭ সালে শ্রীলঙ্কায় ইন্ডিয়ান পিস কিপিং ফোর্স (আইপিকেএফ) মিশনের সময় অস্থায়ী ঘাঁটি পরিচালনা করেছিল ভারত।অন্যদিকে চীনের জিবুতিতে একটি স্থায়ী ঘাঁটি রয়েছে এবং তাজিকিস্তানেও একটি ঘাঁটি নির্মাণ করছে বলে ধারণা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের শতাধিক বিদেশি ঘাঁটি রয়েছে। যার মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার ক্যাম্প হামফ্রিস, কাতারের আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি এবং জার্মানি ও জাপানের একাধিক ঘাঁটি উল্লেখযোগ্য।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102