বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৪৮ অপরাহ্ন

অল্প হলেও নিয়মিত আমলই আল্লাহর প্রিয়

অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট
  • আপডেট টাইম: বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৫

ইবাদত আল্লাহপ্রেমের বাহ্যিক প্রতিফলন। কিন্তু ইবাদতের প্রকৃত সৌন্দর্য নিহিত রয়েছে ধারাবাহিকতায়। অল্প হলেও নিয়মিত আমলই বান্দাকে আল্লাহর কাছে প্রিয় করে তোলে। মহানবী (সা.)-এর জীবন ছিল এই নীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত/

عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَحْتَجِرُ حَصِيرًا بِاللَّيْلِ فَيُصَلِّي، وَيَبْسُطُهُ بِالنَّهَارِ فَيَجْلِسُ عَلَيْهِ، فَجَعَلَ النَّاسُ يَثُوبُونَ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم فَيُصَلُّونَ بِصَلاَتِهِ حَتَّى كَثُرُوا فَأَقْبَلَ فَقَالَ ‏ “‏ يَا أَيُّهَا النَّاسُ خُذُوا مِنَ الأَعْمَالِ مَا تُطِيقُونَ، فَإِنَّ اللَّهَ لاَ يَمَلُّ حَتَّى تَمَلُّوا، وَإِنَّ أَحَبَّ الأَعْمَالِ إِلَى اللَّهِ مَا دَامَ وَإِنْ قَلَّ ‏”‏‏.‏‘আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত যে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতের বেলা চাটাইয়ে ঘেরাও দিয়ে সালাত আদায় করতেন। আর দিনের বেলা তা বিছিয়ে তার ওপর বসতেন। লোকজন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে একত্রিত হয়ে তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করতে লাগল। এমনকি বহু লোক একত্রিত হলো।তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের উদ্দেশে বললেন : হে লোক সকল! তোমরা ’আমল করতে থাকো তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী। কারণ, আল্লাহ তা’আলা ক্লান্ত হন না, বরং তোমরাই ক্লান্ত হয়ে পড়বে। আর আল্লাহর কাছে ওই আমল সবচেয়ে প্রিয়, যা সর্বদা করা হয়, তা কম হলেও।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৮৬১)এই হাদিসের মূল শিক্ষা হলো ইবাদতে ধারাবাহিকতা।পরিমাণ নয়; বরং গুণ ও স্থায়িত্বই আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। মহানবী (সা.) এখানে মুসলমানদের এমন এক আমলপদ্ধতির দিকে আহ্বান করেছেন, যা দীর্ঘস্থায়ী, সহজ ও আন্তরিকতার সঙ্গে সম্পাদিত হয়।ইমাম নববী (রহ.) বলেন— ‘এই হাদিস প্রমাণ করে যে, অল্প আমল হলেও যদি তা নিয়মিত করা হয়, তবে তা বড় আমলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। কারণ ধারাবাহিক আমল আল্লাহর প্রতি আন্তরিকতার প্রমাণ বহন করে।’ (শরহে সদিহ মুসলিম, নববী, খণ্ড ৬, পৃ. ৬৯)ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন— ‘মহানবী (সা.) চেয়েছিলেন যেন উম্মত এমন কোনো ইবাদতে অভ্যস্ত না হয়, যা শুরুতে উৎসাহে করা হয়, পরে ক্লান্তিতে পরিত্যক্ত হয়।কারণ তা নফল আমলের সৌন্দর্য নষ্ট করে।’ (ফাতহুল বারী, খণ্ড ৩, হাদিস নম্বর ১১৩৩-এর ব্যাখ্যা)ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) এই হাদিস থেকে বলেন— ‘ইখলাস বা নিষ্কলুষ নিয়ত তখনই পরিপূর্ণ হয়, যখন বান্দার ইবাদত স্থায়ী হয়। কারণ সাময়িক আবেগ বা উত্তেজনায় করা আমল নয়; বরং অবিরত আমলই বান্দার সত্যিকারের আল্লাহপ্রেম প্রকাশ করে।’ (মাদারিজুস সালিকীন, খণ্ড ২, পৃ. ৩১৫)হাদিসের মর্মার্থ হচ্ছে-

  • ধারাবাহিকতা আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল। — অর্থাৎ সামান্য হলেও নিয়মিত নফল সালাত, কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া বা সাদকা করা অনেক মূল্যবান।
  • মানুষের সামর্থ্য অনুযায়ী আমল করা উচিত। — অতিরিক্ত কষ্টকর আমল মানুষকে ক্লান্ত করে তোলে, ফলে ইবাদতে অনীহা আসে।
  • আল্লাহ ক্লান্ত হন না, বান্দাই ক্লান্ত হয়। — আল্লাহর দয়া অসীম; বান্দা যতটুকু করতে পারে, ততটুকু করলে তিনি সন্তুষ্ট হন।
  • মহানবী (সা.) উম্মতের প্রতি মমতাময় ছিলেন।— তিনি চেয়েছেন উম্মত যেন ভারসাম্যপূর্ণভাবে আমল করে এবং তা অব্যাহত রাখে।এই হাদিস আমাদের শেখায়—ইবাদতে ‘পরিমাণ নয়, স্থায়িত্বই মূল্যবান।’ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় সেই বান্দা, যে প্রতিদিন অল্প হলেও নিয়মিতভাবে তাঁর স্মরণে থাকে। যেমন— দৈনিক দুই রাকাআত তাহাজ্জুদ, কিছুটা কোরআন পাঠ, কিংবা সামান্য দান—যদি তা অবিরত করা যায়, তবে সেটিই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় ইবাদত।আল্লাহ আমাদের সবাইকে নিয়মিত আমলের তাওফিক দান করুন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102