ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩৭ টি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। ঢাকার ২০ আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী মনোনয়ন নিশ্চিত করা হলেও ঢাকা-১৮ আসনসহ অপর ৬ আসনে এখন পর্যন্ত কোন প্রার্থীর নাম ঘোষণা দেয়নি দলটি। এতে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে এসব আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি প্রার্থীদের। ব্যতিক্রয় নয় ঢাকা-১৮ আসন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও।
জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর আসনটিতে গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ, উঠান-বৈঠকসহ দলীয় কার্যক্রমে স্বতঃফূর্তভাবে অংশ নেন স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দ। এসব কর্মসূচিতে কর্মী-সমর্থকদের মাঝে এমপি পদে প্রচার-প্রচারণাতেও সক্রিয় ছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু, বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রার্থী ঘোষণার দিন তালিকায় ঢাকা-১৮ আসন ফাঁকা থাকায় হতাশ অধিকাংশ নেতাকর্মী। তবে গুরুত্বপূর্ণ এই আসনের বিষয়ে বিএনপির হাইকমাণ্ড সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে; এমন আশাতে বুক বেঁধেছেন বিএনপির প্রার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, এম কফিল উদ্দিনের নাম। এছাড়াও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন ও অপর যুগ্ম আহ্বায়ক আফাজ উদ্দিনকেও ঢাকা-১৮ আসনে এমপি প্রার্থী হিসেবে দলীয় প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে ২০১৮ সালের উপ-নির্বাচনে এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। তবে আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন ঘোষণার দিন এই আসনে দলীয়ভাবে এখন পর্যন্ত কাউকে মনোনয়ন না দেয়ায় সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণীর দিকে তাকিয়ে ঢাকা-১৮ আসন বিএনপির এসব প্রার্থীরা।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব ও বিএনপির নমিনেশন প্রত্যাশী মোস্তফা জামান বলেন, দুঃসময় থেকেই বিএনপির সঙ্গে আছি। এলাকার মানুষের উন্নয়নের জন্যই কাজ করতে চাই। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।
তিনি বলেন, ঢাকা-১৮ আসন বিএনপির অন্যতম ঘাঁটি। এলাকর সন্তান হিসেবে এলাকার মানুষের জন্যই রাজনীতি করছি। দলীয় হাইকমাণ্ডের নির্দেশে আমি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। আশা করি দলও আমার প্রতি সুবিচার করবে।
আসনে দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী অপর প্রার্থী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ঢাকার মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম কফিল উদ্দিন আহমেদও। এই প্রার্থী বলেন, আমার জীবনের ৪০ বছর এখানে আমি শ্রম-ঘাম দিয়েছি। আমি এলাকার সন্তান। কয়েক পুরুষ ধরে আমরা এখানে বসবাস করছি। আমার নেতাকর্মী, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবাই এখানকার স্থানীয়। আশা রাখি দল অবশ্যই আমাকে বিবেচনায় রাখবে।
এই আসনে গত ২০১৮ সালের উপ-নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পার্টির ওপর সবসময় আস্থা রাখি। আমাকে যেভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমি তা পালন করেছি। শেষ পর্যন্ত আশা রাখি আমি মনোনয়ন পাব ইনশাআল্লাহ।
নাম ঘোষণা না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা নিয়ে এই প্রার্থী বলেন, নেতাকর্মীদের একটা আশা ছিল একসঙ্গে সব আসনের নাম ঘোষণা হবে। কিন্তু সেটা হয়নি, এটি স্বাভাবিক। দলের প্রতি আমি সবসময় আশাবাদী।
একই আশা ব্যক্ত করেছেন অপর দুই প্রার্থী যথাক্রমে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন ও যুগ্ম আহ্বায়ক আফাজ উদ্দিন। ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়নের ব্যাপারে এই দুই প্রার্থীর বক্তব্য- দলীয় মনোনয়নে সংসদ নির্বাচন সকল রাজনীতিবিদের সর্বোচ্চ পাওয়া। এলাকায় পার্টির জন্যই কাজ করে যাচ্ছি। মনোনয়ন পাওয়ার আশা রাখি।
অপরদিকে, গুঞ্জন রয়েছে ঢাকার এসব ফাঁকা আসনে বিএনপি জোটভুক্ত শরীক দলের নেতাদের মনোনয়ন দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এরই মধ্যে ঢাকা-১৮ আসনে আসতে পারে বিএনপির অন্যতম শরীক দল নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার নাম। এছাড়াও জুলাই আন্দোলনে উত্তরার আলোচিত শহিদ মীর মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বিএনপির সদস্য হওয়ায় আলোচনের তুঙ্গে রয়েছেন তিনিও। এমন অবস্থায় আসনে শরিকদলের প্রার্থীদের মনোনয়ন দিলে কপাল পুড়বে স্থানীয় বিএনপির এসব মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। তবে এ বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তকেই প্রাধান্য দেয়ার কথা জানিয়েছেন প্রার্থীরা।
এ ব্যাপারে ঢাকা-১৮ আসন অর্থাৎ বৃহত্তর উত্তরায় ছাত্র রাজনীতি থেকে বিএনপিতে সক্রিয় মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন বলেন, দলীয় স্বার্থে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হোক সে যেন ভাল কেউ হয়। এস এম জাহাঙ্গীর বলেন, পার্টি যে সিদ্ধান্ত নেবে তা আমি মেনে নেব। পার্টির ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে।