এক চিঠিতে পিট এটিকে বর্ণনা করেছিলেন, ‘কোন খুঁত ছাড়াই চমৎকার স্ফটিকের মতো পানি’।
পিট ১৭১৭ সালে হীরাটি বিক্রি করেন ফরাসি রাজপ্রতিনিধি ডিউক অব অরলিয়ঁর কাছে, সেই থেকেই এর নাম ‘রিজেন্ট ডায়মন্ড’।
রাজদরবার থেকে গিলোটিন পর্যন্ত
রিজেন্ট হীরা পরে শোভা পায় ফরাসি রাজমুকুটে। লুই ষোড়শ এবং মারি আঁতোয়ানেত দুজনেই এটি পরেছিলেন। কিন্তু তাদের পরিণতি ও ফরাসি বিপ্লবের সময় গিলোটিনে মৃত্যুদণ্ড এই হীরাকে ঘিরে ‘অভিশাপের’ ধারণাকে আরো জোরদার করে।১৭৯২ সালে বিপ্লবের অরাজকতায় ফরাসি রাজকীয় গয়না চুরি হলে রিজেন্ট ডায়মন্ডও খোয়া যায়। তবে এর এক বছর পর রিজেন্ট ডায়মন্ড উদ্ধার হলে তা নেপোলিয়ন বোনাপার্টের তলোয়ারে বসানো হয়।
নেপোলিয়নের পতনের পর এটি আবার রাজপরিবারে ফেরে, অবশেষে উনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে এসে ল্যুভর জাদুঘরে স্থান পায়।
১৮৮৭ সাল থেকে রিজেন্ট ডায়মন্ড প্রদর্শিত হচ্ছে লুভরের বিখ্যাত গ্যালারি দ্য আপোলন–এ। সোনালি কারুকাজ, দেয়ালচিত্র আর ট্যাপেস্ট্রিতে মোড়া এই গ্যালারিতেই রয়েছে ডায়মন্ডসহ ফরাসি রাজমুকুটের অন্যান্য রত্ন।
রিজেন্টের রহস্য এখনো অমীমাংসিত
তাহলে কি সত্যিই রিজেন্ট ডায়মন্ডের ‘অভিশাপ’ চোরদের থামিয়ে দিয়েছে? কেউ বলেন কাকতালীয়, কেউ বিশ্বাস করেন কিংবদন্তিতে।
প্যারিসের প্রসিকিউটর লর বেকোয়া জানিয়েছেন, ‘আমি কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারছি না কেন ওরা রিজেন্ট ডায়মন্ডকে স্পর্শও করেনি।’
তিনি বলেন, ‘চোরদের গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত বোঝা সম্ভব নয়, তারা ঠিক কী পরিকল্পনা করেছিল, আর কেন ওই জানালায় (যেখানে হীরাটি ছিল) হাত দেয়নি।’
ফ্রান্সের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় জানায়, চুরি হওয়া আটটি রত্নের মধ্যে উনবিংশ শতাব্দীর ফরাসি রাজপরিবারের নেকলেস, কানের দুল, টায়ারা ও ব্রোচ আছে।
এমনকি নেপোলিয়ন তৃতীয়ের স্ত্রী সম্রাজ্ঞী ইউজিনির টায়ারা ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে ঘটনাস্থল থেকে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মোট নয়টি রত্ন চুরির টার্গেট ছিল।
লুভর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘এই রত্নগুলোর বাজারমূল্যের বাইরে এদের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য অমূল্য।’
চুরি যাওয়া গয়নার মূল্য ১০২ মিলিয়ন ডলার
বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, চুরি হওয়া আটটি রত্নের মূল্য ধরা হয়েছে ৮৮ মিলিয়ন ইউরো, অর্থাৎ প্রায় ১০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রসিকিউটর বেকোয়া জানান, এই তথ্য প্রকাশের উদ্দেশ্য হলো রত্নগুলো ধ্বংস বা গলিয়ে না ফেলার জন্য চোরদের নিরুৎসাহিত করা।
তবে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, হয়তো ইতিমধ্যেই দেরি হয়ে গেছে। অনেকেই মনে করছেন, চোরেরা রত্নগুলো ভেঙে ছোট অংশে বিক্রি বা পাচার করে ফেলতে পারে।