মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য ও বাণিজ্য শুল্কনীতি ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে এক নতুন উত্তেজনার মুখে ঠেলে দিয়েছে। একদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘বন্ধু’ বলে সম্বোধন করলেও, অন্যদিকে তার দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প ভারতের ওপর চাপ বৃদ্ধি করে চলেছেন।
চলতি বছরের আগস্ট থেকে ভারতের ওপর ৫০% শুল্ক কার্যকর করার পর, সেপ্টেম্বরে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমেছে ২০% এবং চার মাসে এই পতন দাঁড়িয়েছে ৪০%-এ। দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বলছে, ট্রাম্পের শুল্কনীতির সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারত অন্যতম।
সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে এক আলোচনায় ট্রাম্প দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি তাকে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধের আশ্বাস দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ভারতে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ধরনের কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, তা জানে না বলে জানালেও—সরাসরি ট্রাম্পের দাবি অস্বীকার করেনি।
বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী মোদিকে ‘ট্রাম্প-ভীতু’ বলে উল্লেখ করে বলেন, “ভারতের কৌশলগত সিদ্ধান্ত কেন ট্রাম্প ঘোষণা করবেন?” ভারতের সাবেক বিদেশ সচিব কানওয়াল সিব্বল বলেন, “ট্রাম্প বিভ্রান্তিকর কথা বলছেন এবং কথার মানে নিজের মতো করে তৈরি করছেন।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের দাবির সময়টাও তাৎপর্যপূর্ণ—কারণ এ সময় ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ভারত রাশিয়া থেকে তেল না কিনলে সেটা কৌশলগত সম্পর্কের জন্য ভালো। কিন্তু রাশিয়া ভারতের দীর্ঘদিনের অংশীদার এবং দেশটি বর্তমানে রাশিয়া থেকে কম দামে অপরিশোধিত তেল পাচ্ছে।
ক্রেডিট রেটিং সংস্থা ICRA বলছে, রাশিয়া থেকে ছাড়ে তেল কিনে গত বছর ভারত প্রায় ৩.৮ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করেছে। বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের বার্ষিক রপ্তানি ৮৭ বিলিয়ন ডলার, যা ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতিতে হুমকির মুখে পড়েছে।
বিশ্লেষণ বলছে, ভারত বর্তমানে এক কঠিন কৌশলগত দ্বিধার মধ্যে রয়েছে—রাশিয়ার সঙ্গে পুরনো বন্ধুত্ব বজায় রাখবে, না কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা করবে?