সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:০৯ অপরাহ্ন

শিবিরকে হলে মেরে ফেলা হতো ‘হিপোক্রেসির’ মাধ্যমে: সাদিক কায়েম

ন্যাশনাল ডেস্ক
  • আপডেট টাইম: সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
সংগৃহীত ছবি | উত্তরা নিউজ

জুলাই বিপ্লবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ইকরামুল হক সাজিদের আত্মত্যাগ স্মরণে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম বলেছেন, “শিবিরকে হলে মেরে ফেলা হতো—হিপোক্রেসির মাধ্যমে।”

সোমবার (১৩ অক্টোবর) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামি ছাত্র শিবিরের উদ্যোগে আয়োজিত আন্তঃবিভাগ পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সাদিক কায়েম বলেন, স্লোগান আর মুক্তির কথা বলতে গিয়ে আমরা ১৬ বছর ধরে এক যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছি। এই সময়ে ফ্যাসিস্টদের উত্থান দেখেছি, দেখেছি শিক্ষক, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের অনেকেই জুলুমের বিরুদ্ধে মুখ না খুলে মৌন সম্মতি দিয়েছে। তারা মুক্তির কথা বলেছে, কিন্তু হিপোক্রেসির মাধ্যমে ফ্যাসিস্টদেরই টিকিয়ে রেখেছে।

তিনি বলেন, ইসলামি ছাত্র শিবির সবসময় সৃজনশীলতা, কল্যাণ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কাজ করে আসছে। “সুন্দর সমাজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে সবাইকে সচেতন হতে হবে,” যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, জুলাই আন্দোলনের সকল শহীদ ও গাজীদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। যারা এখনো হাসপাতালে আছেন, তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের হাসিবের প্রতিও রইল শ্রদ্ধা।”

তিনি অভিযোগ করেন, ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনায়ও অনেক বুদ্ধিজীবী নিরব থেকেছেন। “তারা সমাজের প্রকৃত মুক্তির কথা কখনো বলেননি,” বলেন সাদিক।

সাদিক কায়েম বলেন, “আজ আমরা মুক্তভাবে কথা বলতে পারি। একসময় হলে শিবিরের নাম বললেই মারধর, নির্যাতন, এমনকি হত্যা করা হতো—হিপোক্রেসির মাধ্যমে। এখন অন্তত নিজেদের পরিচয় বলতে পারি, এটা বড় অর্জন।”

তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক গুম ও নির্যাতনের রিপোর্টে দেখা গেছে, ইসলামি ছাত্র শিবিরের সদস্যরাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয়েছে। অথচ আমরাই শিক্ষার্থীদের প্রকৃত রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছি যা ৫ আগস্টের সেটা আমরা প্রতিটা ক্যাম্পাসে দেখিয়েছি।”

ছাত্র রাজনীতির সংস্কার নিয়েও কথা বলেন ডাকসু ভিপি। তিনি বলেন, “আগস্টের পরে আমরা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি তুলেছি। বিশ্ববিদ্যালয় হবে জ্ঞানের ভাণ্ডার।”

সাদিক কায়েম আরও বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে গবেষণার জন্য বরাদ্দ খুবই সামান্য। শিক্ষকরা সাদা-নীল দলে বিভক্ত—এই বিভাজন বন্ধ করতে হবে। শিক্ষকদের সম্মান দিতে হবে, তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে হবে।”

তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, যেন শিক্ষকদের ওপর কোনো ধরনের ফ্যাসিবাদী আচরণ বা দমননীতি প্রয়োগ না করা হয়। আগামী বাংলাদেশের পুনর্গঠনের জন্য শিক্ষকদের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।

সাদিক কায়েম আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আগামী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে শাখা ইসলামি ছাত্র শিবির প্যানেল সার্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য হবে।

অনুষ্ঠানে শহিদ সাজিদের বোন ফারজানা বলেন, “জকসু নির্বাচনে যে-ই আসুক না কেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে কাজ করবে, শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কাজ করবে—এটাই প্রত্যাশা। আর আমি চাই, শহিদ সাজিদের পরিবারের পক্ষ থেকে যেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাজিদের নামটি যুগ যুগ ধরে অমর হয়ে থাকে।”

বিশেষ অতিথি ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বেলাল হোসাইন বলেন, “বিতর্ক এমন একটি মাধ্যম, যা যুক্তি খণ্ডনের মাধ্যমে চিন্তাশক্তিকে শাণিত করে। আমারও একসময় কিছুটা জড়তা ছিল, কিন্তু বিতর্কে অংশ নেওয়ার পর তা কেটে গেছে। বিতর্ক শুধু আত্মবিশ্বাস বাড়ায় না, পরীক্ষার খাতায়ও যুক্তিনির্ভর ও সুন্দরভাবে মত প্রকাশে সাহায্য করে। যে বিতর্ক করতে পারে, সে তাৎক্ষণিকভাবে নিজের ভাবনা উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়। রাজনৈতিকভাবে সচেতন হওয়াটা প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে দেশকে নেতৃত্ব দিতে চাইলে রাজনৈতিক সচেতনতা থাকা অপরিহার্য। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষককে জ্ঞান-নির্ভর কাজে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।”

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102