ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্পষ্ট হচ্ছে নির্বাচনী মেরুকরণ। বিএনপি নেতৃত্বাধীন একটি বৃহৎ নির্বাচনি জোট গঠনের কার্যক্রম ইতোমধ্যে ত্বরান্বিত হয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে একাধিক দফা বৈঠক করে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা চেয়েছে দলটি। পাশাপাশি চলছে ইসলামি দল ও নতুন উদীয়মান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগও।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, তারা ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণফোরাম, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি ও অন্যান্য শরিকদের সমন্বয়ে বৃহৎ নির্বাচনি জোট গঠনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু দল ৩০ থেকে ৫০টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকাও জমা দিয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা চাওয়ার পর ১২ দলীয় জোট, গণফোরাম, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এলডিপি, জাতীয় পার্টি (পার্থ), লেবার পার্টি ও অন্যান্য শরিকেরা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চ এখনো পুরোপুরি তালিকা দেয়নি। তবে ১২০টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে তারা।
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা জানান, তারা নির্বাচনি কৌশলকে ‘আসন সমঝোতার’ চেয়েও বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন। রাজনৈতিক আদর্শ ও অবস্থান বিবেচনায় তারা নির্বাচনের আগে বিস্তারিত পর্যালোচনার কথা বলছেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থন থেকে আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো জোটে না থাকলেও বিএনপির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলাপ চলছে। দলটির একটি অংশ জামায়াতের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ। এনসিপি, এবি পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও নির্বাচনি মেরুকরণ নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে।
বিএনপি জামায়াত ছাড়াও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ বেশ কয়েকটি ইসলামি দলের সঙ্গে নির্বাচনি সমঝোতার চেষ্টা করছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লালবাগের আসনে ইসলামী নেতাদের জন্য আসন ছাড় দেওয়ার ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে। খেলাফত মজলিস আসন্ন সাধারণ পরিষদ ও শূরা বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
ইতিমধ্যে হাটহাজারী মাদরাসা, হেফাজতের নেতৃবৃন্দ, ছারছীনা পীর ও অন্যান্য প্রভাবশালী আলেমদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বিএনপি। দলটির লক্ষ্য—সব জনগোষ্ঠীকে একত্র করে একটি জাতীয় ঐক্যের পরিবেশ তৈরি করা।
বিশ্লেষণ:
রাজনৈতিক পরিস্থিতি যত এগোচ্ছে, নির্বাচনি কৌশল ততটাই জোরালো হচ্ছে। বিএনপির নেতৃত্বে একটি বড় জোট গঠনের সম্ভাবনা দৃশ্যমান। তবে আদর্শ, রাজনৈতিক লক্ষ্য এবং আসন ভাগাভাগির হিসাব-নিকাশই ঠিক করবে—কে কার পাশে থাকবে।