শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৪২ অপরাহ্ন

রপ্তানি আয় বাড়লেও হচ্ছে না বাজার সমপ্রসারণ

ন্যাশনাল ডেস্ক
  • আপডেট টাইম: মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৫
সংগৃহীত ছবি | উত্তরা নিউজ

রপ্তানি বাজার বহুমুখীকরণের ওপর জোর দেওয়া হলেও তা হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আয় বাড়লেও বাজার সমপ্রসারণের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। নির্দিষ্ট কয়েকটি বাজারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা তৈরি হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদে ঝুঁকি বাড়ছে। জানা যায়, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ২ মাসে রফতানি আয় এসেছে ৮৬৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৬১ শতাংশ বেশি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত একাই মোট রপ্তানির ৮৪ শতাংশের বেশি জোগান দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও যুক্তরাজ্য-এই চারটি বাজারেই বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির প্রায় ৭৫ শতাংশ যাচ্ছে। কিন্তু নতুন বাজার খোঁজার উদ্যোগগুলো এখনও প্রত্যাশিত ফল দিচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও পূর্ব এশিয়ার বাজারে প্রবেশের জন্য সরকারি পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা ও বাণিজ্য চুক্তির উদ্যোগ বাড়ানো প্রয়োজন। বর্তমানে ভারত, চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে কিছুটা প্রবেশাধিকার থাকলেও তা সীমিত আকারে। অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে শ্রমশক্তি রপ্তানি হলেও পণ্য রপ্তানিতে বড় কোনো সাফল্য আসেনি।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) এক পরিচালক বলেন, আমরা বারবার বলছি-শুধু ইউরোপ-আমেরিকার ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। নতুন বাজারে প্রবেশ না করলে ভবিষ্যতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে। সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৭০ শতাংশ এসেছে মাত্র ১০টি দেশ থেকে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪৮ দশমিক ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার ৬৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ-অর্থাৎ প্রায় ৩৩ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার মাত্র ১০টি দেশে কেন্দ্রীভূত। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় ছিল ৪৮ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে প্রায় ১৪ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ মোট রপ্তানির ৬৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ এসেছে মাত্র ১০টি দেশ- যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা, ভারত, নেদারল্যান্ডস ও পোল্যান্ড থেকে। এই তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রপ্তানি বাজার, যেখানে মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় বেশি। মার্কিন বাজারে রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের মোট রপ্তানির ১৮ শতাংশ।

আগের বছরের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে শুধু তৈরি পোশাক রপ্তানিতেই আয় হয়েছে ৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি। দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার জার্মানিতে রপ্তানি আয় ৫ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি এবং মোট রপ্তানির ১০ দশমিক ৯৬ শতাংশ। যুক্তরাজ্যে রপ্তানি বেড়ে হয়েছে ৪ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার (৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ), স্পেনে ৩ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার (৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ), ফ্রান্সে ২ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার (৫ শতাংশ), ইতালিতে ১ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার (৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ) এবং কানাডায় ১ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার (৩ দশমিক ০৩ শতাংশ)। নেদারল্যান্ডসে রপ্তানি হয়েছে ২ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার (৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ), পোল্যান্ডে ১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার (৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ) এবং ভারতে ১ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার (৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ)। বছরের পর বছর ধরে রপ্তানি বাজার বহুমুখীকরণের আহ্বান জানিয়ে আসছেন সংশ্লিষ্টরা, যেন নির্দিষ্ট কিছু বাজারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কমানো যায়। কিন্তু সেই আহ্বান এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি প্রধান বাজার বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানো এবং কঠোর বাণিজ্য নীতি গ্রহণ শুরু করেছে, যা বিকল্প বাজার খুঁজে না পেলে দেশের রপ্তানি খাতে বড় ধরনের চাপ তৈরি করতে পারে বলে মন্তব্য করেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাজার সমপ্রসারণ না হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- নতুন বাজারে প্রবেশের জন্য পর্যাপ্ত গবেষণা ও কৌশলগত পরিকল্পনার অভাব, দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরে ধীরগতি, পণ্যের বৈচিত্র্য না থাকা, লজিস্টিকস ও শিপিং খরচ বেশি হওয়া এবং আন্তর্জাতিক মান ও সনদপত্র অর্জনে জটিলতা। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের বড় অংশ তৈরি পোশাক থেকে এলেও কৃষিপণ্য, চামড়া, ওষুধ, আইটি সেবা ও হালকা প্রকৌশল খাতে সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এসব খাত এখনও কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বৈদেশিক বাজারে প্রবেশ করতে পারেনি। রপ্তানি খাতের সঙ্গে যুক্তরা বলছেন, শুধু আয় বাড়ানোই যথেষ্ট নয়, বরং বাজার বৈচিত্র্য নিশ্চিত করতে না পারলে সামান্য বৈশ্বিক সংকটেই বড় ধরনের ধাক্কা খাওয়ার ঝুঁকি থাকবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102