﴿الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا﴾
‘ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভা।’ (সুরা আল-কাহফ, আয়াত: ৪৬)
তারা আমাদের মালিকানার বস্তু নয়, বরং এক আমানত । পিতা-মাতার দায়িত্ব হলো এই আমানতের সঠিক লালন-পালন ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়া। পবিত্র কোরআনে আমরা দেখতে পাই নবী ইবরাহীম (আ.)-এর দোয়ায় শিশুদের জন্য দীনি-চেতনা জাগানোর মর্মস্পর্শী প্রার্থনা—
﴿رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي﴾
‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ও আমার সন্তানদের নামায কায়েমকারী বানাও।’ (সুরা ইবরাহীম, আয়াত: ৪০)
অতএব, শিশুর প্রতি ভালোবাসা শুধু আবেগ নয়, বরং এটি ইবাদাতের অংশ— কারণ এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর শিশুপ্রেম ও কোমল আচরণ
রসূলুল্লাহ (সা.) শিশুদের প্রতি যে গভীর মমতা ও সহনশীলতা দেখাতেন, তা মানব ইতিহাসে অনন্য।
আবু হুরাইরাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা হাসান ইবনু ’আলীকে চুম্বন করেন। সে সময় তাঁর নিকট আকরা’ ইবনু হাবিস তামীমী উপবিষ্ট ছিলেন।
“ مَنْ لاَ يَرْحَمُ لاَ يُرْحَمُ ”.
অর্থ: ‘যে দয়া করে না, সে দয়া পায় ন’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৯৭)
রাসুল (সা.) যখন নামাজে থাকতেন, তখন তাঁর নাতি হাসান ও হুসাইন (রা.) তাঁর পিঠে উঠে পড়লে তিনি সিজদা দীর্ঘ করতেন, যতক্ষণ না তারা নিজে থেকে নেমে যায়। এটাই ছিল রসূলুল্লাহ (সা.) এর শিক্ষণীয় পিতৃত্ব— ধৈর্য, ভালোবাসা ও হাসিমুখে সন্তানের দুষ্টুমি সহ্য করা।
আমরা যে ভুলে যাই…
একটি শিশু যখন জন্মায়, তখন তার আগমনে একটি ঘর আলোকিত হয়ে ওঠে। সবাই তাকে ঘিরে রাখে ভালোবাসা ও সোহাগে। কিন্তু কিছু কাল পর যখন সে একটু দুষ্টুমি করে, যখন তার কণ্ঠে নিজের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে, তখনই আমরা বিরক্ত হয়ে যাই।
একদিন যে শিশু সবার মুখে হাসি ফোটাতো, হতাশ জীবনে আশার আলো জ্বেলেছিল— সময়ের ব্যবধানে সেই শিশুটিই হয়ে পড়ে “ঝামেলা”। অথচ শিশুর হৃদয় নিষ্পাপ, আয়নার মতো স্বচ্ছ। সে যা দেখে তাই শিখে। তার ব্যতিক্রম আচরণ প্রায়শই বড়দের আচরণের প্রতিফলন। তাই তাকে শুধরে দেওয়ার শ্রেষ্ঠ উপায় হলো নিজের চরিত্রকে পরিশুদ্ধ করা এবং তার সামনে আদর্শ স্থাপন করা।
শিশুর হৃদয় জয় করার ইসলামি পথ
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন
عَنْ عَائِشَةَ، زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ إِنَّ الرِّفْقَ لاَ يَكُونُ فِي شَىْءٍ إِلاَّ زَانَهُ وَلاَ يُنْزَعُ مِنْ شَىْءٍ إِلاَّ شَانَهُ ” .
‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নম্রতা যে কোন বিষয়কে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। আর যে কোন বিষয় থেকে নম্রতা বিদূরিত হলে তাকে কলুষিত করে।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৫৯৪)
অতএব, শিশুদের সাথে আচরণে রূঢ়তা নয়, কোমলতা ও স্নেহই ইসলামের শিক্ষা।
আমরা যদি আমাদের সন্তানদের আদর, মায়া, দোয়া ও ভালোবাসায় ভরিয়ে দিই, তবে তাদের হৃদয় জয় করা কঠিন নয়।
শিশুর চোখে তখন ফুটে উঠবে সেই আস্থার ফুল, যার সুবাস ছড়িয়ে পড়বে সমাজে, জাতিতে, মানবতার মাঝে।
আসুন আমরা প্রত্যেকে নিজের ঘরটিকে মানব বাগান বানাই। আমাদের সন্তানেরা যেন হয় সেই ফুল, যারা কাঁটায় নয়, সুবাসে মানুষকে ভরিয়ে দেয়।
যদি আমরা তাদেরকে কোরআনের আলোয় লালন করি, নবীর মমতায় স্পর্শ করি— তবে একদিন তারা হবে আমাদের সমাজের শ্রেষ্ঠ সম্পদ, আমাদের আমলনামার উজ্জ্বল পৃষ্ঠা।