১. এমন সমুদ্র ও নদীর পানি, যেখানে কারো মালিকানা নেই। সত্তাগতভাবে এ পানি সবার জন্য বৈধ এবং তা বিক্রি করার জায়েজ নেই। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৭৭)
২. মালিকানাবিহীন পানি নিজ পরিশ্রম ও উদ্যোগে সঞ্চয় ও সংরক্ষণ করা।
৩. কূপ, পুকুর, ঝরনা ও মালিকানাধীন খালের পানি। এ ধরনের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।
হানাফি মাজহাবের আলেমরা ও শাফেয়ি মাজহাবের বেশির ভাগ ফকিহ বলেছেন, এটি হক, মালিকানা নয়। (নাইলুল আওতার : ৫/২৫৯)
হক হওয়ার উদ্দেশ্য হলো, তা মালিকানা নয়। ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) বলেছেন, কূপ, পুকুর, ঝরনা ও চ্যানেলের মালিক পানির অগ্রাধিকারী। তবে তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি মানুষ, পশু, পাখি, চতুষ্পদ প্রাণী ও অন্যান্য প্রাণীকে পান করতে দেওয়া আবশ্যক। জমি, ক্ষেত বা বাগান সেচ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারবে। (কিতাবুল খারাজ : ৯৫)
তবে তিনি বলেছেন, সেচের জন্য এ ধরনের পানি বিক্রি না-জায়েজ হওয়ার কারণ হলো, তার পরিমাণ অনির্দিষ্ট। এ কারণ দর্শানো থেকে বোঝা যায় যে কোনোভাবে যদি অনির্দিষ্টতা দূর হয়ে যায়, তাহলে তা বিক্রি করা জায়েজ হবে। যেমন—পাত্র ইত্যাদির মাধ্যমে তার পরিমাণ নির্ধারণ করা। কেননা ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) না-জায়েজ হওয়ার কারণ এটি বলেননি যে তা মালিকানা নয়। তিনি কারণ দর্শিয়েছেন যে তার পরিমাণ অনির্দিষ্ট।
আমাদের যুগের বড় ট্যাংকি—যেখানে অনেক পানি জমা রাখা হয়, এগুলো সংরক্ষিত পানির দ্বিতীয় প্রকারের আওতাভুক্ত। কেননা ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) বলেছেন, কেউ যদি পানি সংরক্ষণাগার করে সেখানে অনেক পানি জমা করার পর পাত্রের মাধ্যমে সেখান থেকে বিক্রি করে, তা হলে তা জায়েজ আছে। (ফিকহুল বুয়ু)
জমজমের পানি বিক্রির বিধান
পানির ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো, পানি যতক্ষণ তার উৎস বা প্রবাহে থাকে ততক্ষণ তা বিক্রি করা জায়েজ নয়। কিন্তু যখন কেউ কোনো পাত্রে পানি সংগ্রহ করে নেয় তখন তা বিক্রি করা জায়েজ। এ বিষয়ে উলামায়ে কিরামের মধ্যে মতপার্থক্য নেই। তাই বৈধ উপায়ে সংগ্রহ করা গেলে জমজমের পানি বিক্রি করতে কোনো বাধা নেই।
ইবনে কুদামা (রহ.) লিখেছেন, ‘কেউ যখন কোনো পাত্রে পানি সংগ্রহ করে, তখন সে সেটার মালিক হয়ে যায় এবং তা বিক্রি করা তার জন্য জায়েজ। এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে কোনো মতানৈক্য নেই। শহরের বিভিন্ন স্থানে পাত্রের ভেতর পানি বিক্রির প্রথা বহু আগে থেকেই চলে আসছে। কেউ এতে আপত্তি জানায়নি। কাউকে তার মালিকের অনুমতি ছাড়া সে পানি পান করতে, অজু করতে বা নিতে নিষেধ করা হয় না।
অনুরূপভাবে যদি কেউ তার কূপ বা সাধারণ কোনো কূপ থেকে বালতি বা চাকা (কূপ থেকে পানি তোলার জন্য ব্যবহৃত ঘূর্ণায়মান যন্ত্র) এর মাধ্যমে পানি তোলে, তবে যে পানি সে ওপরে তোলে, তা তার মালিকানাধীন এবং সে তা বিক্রি করতে পারবে। কারণ সে তা তার পাত্রে নিয়ে মালিকানা লাভ করেছে। ইমাম আহমদ (রহ.) বলেছেন : ‘নবী (সা.) শুধু কূপ ও ঝরনার বাড়তি পানি তার উৎসস্থলে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। আর মূল কূপ ও ঝরনা বিক্রি করা জায়েজ এবং যে তা ক্রয় করবে তার পানির ওপর সেই বেশি অধিকার রাখে।’ (আল-মুগনি : ৪/২১৫)
শাইখ ইবনে বাজ (রহ.) বলেছেন, ‘জমজমের পানি বিক্রি করা বা মক্কা থেকে তা বহন করে নিয়ে যেতে কোনো অসুবিধা নেই।’
(মাজমু ফাতাওয়া ইবনে বাজ : ১৬/১৩৮)
পানি বোতলজাত করে বিক্রি
‘যখন কেউ কূপ বা নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে তা কলস বা অন্য কোনো পাত্রে রাখে, তখন সেটি তার নিয়ন্ত্রণে আসে এবং সে এর মালিক হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে বিক্রি করা জায়েজ হয়। একইভাবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করলেও তা ব্যক্তিগত মালিকানায় আসে এবং বিক্রি করা বৈধ হয়।’ (আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১২২)
অতএব ইসলামের দৃষ্টিতে ফিল্টার করা পানি বোতলজাত করে বাজারে বিক্রি করা বৈধ।
ওয়াসার পানি বিক্রির বিধান
জুবাইর ইবনু আওয়াম (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ রশি নিয়ে খড়ির আঁটি বেঁধে তা বিক্রি করে, এতে আল্লাহ তাআলা তার সম্মান রক্ষা করেন, এটা তার জন্য মানুষের কাছে ভিক্ষা চাওয়ার চেয়ে উত্তম! লোকজনের কাছে এমন চাওয়ার চেয়ে, যে চাওয়ায় কিছু পাওয়া যেতে পারে বা নাও পারে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৩৭৩)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, মানুষ যখন উন্মুক্ত কোনো জিনিস আয়ত্ত করে তখন সেটার মালিক হয়ে যায়। চাই সেটা লাকড়ি হোক, কিংবা পানি।
কাজেই নদী-নালা ও ভূগর্ভস্থ পানি পরিশোধিত করার দ্বারা মালিকানা সাব্যস্ত হয়। তাই এই পানি সরবরাহ করে অর্থ গ্রহণ করা অর্থাৎ কেনাবেচা বৈধ।