শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৯ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:
বিএনপির ৩১ দফা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: এম কফিল উদ্দিন আহমেদ খেলাধুলার চর্চার মধ্য দিয়েই গড়ে উঠবে মাদকমুক্ত ও সুস্থ জাতি : আমিনুল হক বিমানবন্দর এলাকায় সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানে উঠান বৈঠক করলেন বিএনপি নেতা মোস্তফা জামান আমরা চাই মানুষ তার প্রাপ্য অধিকার ফিরে পাক: মোস্তফা জামান আমি ঢাকা-১৮ আসনের উন্নয়নে কাজ করতে চাই: এম কফিল উদ্দিন আহমেদ টাইফয়েড জ্বর কীভাবে ছড়ায়? কিভাবে টিকা নিবেন? ইসরাইলি কারাগার থেকে মুক্তি পেতে পারেন মারওয়ান বারগুতি টাইফয়েড জ্বর কতটা মারাত্মক? টিকা কোথায় পাবেন? সাহিত্যে নোবেল পেলেন হাঙ্গেরির লেখক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই ১২ অক্টোবর থেকে শুরু টাইফয়েড টিকা কার্যক্রম

ইসলামে পানি বিক্রি সংক্রান্ত বিধি-বিধান

অনলাইন ডেক্স রির্পোট
  • আপডেট টাইম: সোমবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৫
পবিত্র কোরআনে পানির সমার্থক শব্দ ‘মাউন’ ৬৩ বার ব্যবহৃত হয়েছে। পানি আল্লাহর অপূর্ব নিয়ামত। পবিত্র কোরআনের এক আয়াতে এসেছে, ‘তিনি (আল্লাহ) নিজ অনুগ্রহে সুসংবাদবাহী বায়ু পাঠান এবং আমি আকাশ থেকে বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করি। যা দিয়ে আমি মৃত ভূখণ্ডকে সঞ্জীবিত করি এবং আমার সৃষ্টির মধ্যে অনেক জীবজন্তু ও মানুষকে তা পান করাই। (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৪৮-৪৯)তাই মৌলিকভাবে এই পানিতে সবার অধিকার সাব্যস্ত। একজন মুহাজির সাহাবি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (সা.)-এর সঙ্গে তিনবার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, মুসলিমরা তিনটি জিনিসে সমানভাবে অংশীদার : পানি, ঘাস ও আগুন।

(আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৭৭)সুতরাং সৃষ্টির জন্য উন্মুক্ত খাল-বিল-সাগর-নদীতে থাকা পানি বিক্রি করা হারাম।এবং হাদিসে এসেছে, নবী (সা.) পানি বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১২৭১)

পানি কয়েক ভাগে বিভক্ত

১. এমন সমুদ্র ও নদীর পানি, যেখানে কারো মালিকানা নেই। সত্তাগতভাবে এ পানি সবার জন্য বৈধ এবং তা বিক্রি করার জায়েজ নেই। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৭৭)

২. মালিকানাবিহীন পানি নিজ পরিশ্রম ও উদ্যোগে সঞ্চয় ও সংরক্ষণ করা।

সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এটি সংরক্ষণকারীর মালিকানাধীন। তাই তা বিক্রি করা জায়েজ। এ দুই প্রকার পানির বিধানে আলেমদের দ্বিমত নেই। 

৩. কূপ, পুকুর, ঝরনা ও মালিকানাধীন খালের পানি। এ ধরনের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।

শাফেয়ি মাজহাবের কিছু ফকিহ বলেছেন, এটি পাত্রে সংরক্ষিত পানির মতো মালিকানাধীন পানি। 

হানাফি মাজহাবের আলেমরা ও শাফেয়ি মাজহাবের বেশির ভাগ ফকিহ বলেছেন, এটি হক, মালিকানা নয়। (নাইলুল আওতার : ৫/২৫৯)

হক হওয়ার উদ্দেশ্য হলো, তা মালিকানা নয়। ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) বলেছেন, কূপ, পুকুর, ঝরনা ও চ্যানেলের মালিক পানির অগ্রাধিকারী। তবে তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি মানুষ, পশু, পাখি, চতুষ্পদ প্রাণী ও অন্যান্য প্রাণীকে পান করতে দেওয়া আবশ্যক। জমি, ক্ষেত বা বাগান সেচ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারবে। (কিতাবুল খারাজ : ৯৫)

তবে তিনি বলেছেন, সেচের জন্য এ ধরনের পানি বিক্রি না-জায়েজ হওয়ার কারণ হলো, তার পরিমাণ অনির্দিষ্ট। এ কারণ দর্শানো থেকে বোঝা যায় যে কোনোভাবে যদি অনির্দিষ্টতা দূর হয়ে যায়, তাহলে তা বিক্রি করা জায়েজ হবে। যেমন—পাত্র ইত্যাদির মাধ্যমে তার পরিমাণ নির্ধারণ করা। কেননা ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) না-জায়েজ হওয়ার কারণ এটি বলেননি যে তা মালিকানা নয়। তিনি কারণ দর্শিয়েছেন যে তার পরিমাণ অনির্দিষ্ট।

আমাদের যুগের বড় ট্যাংকি—যেখানে অনেক পানি জমা রাখা হয়, এগুলো সংরক্ষিত পানির দ্বিতীয় প্রকারের আওতাভুক্ত। কেননা ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) বলেছেন,  কেউ যদি পানি সংরক্ষণাগার করে সেখানে অনেক পানি জমা করার পর পাত্রের মাধ্যমে সেখান থেকে বিক্রি করে, তা হলে তা জায়েজ আছে। (ফিকহুল বুয়ু)

জমজমের পানি বিক্রির বিধান

পানির ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো, পানি যতক্ষণ তার উৎস বা প্রবাহে থাকে ততক্ষণ তা বিক্রি করা জায়েজ নয়। কিন্তু যখন কেউ কোনো পাত্রে পানি সংগ্রহ করে নেয় তখন তা বিক্রি করা জায়েজ। এ বিষয়ে উলামায়ে কিরামের মধ্যে মতপার্থক্য নেই। তাই বৈধ উপায়ে সংগ্রহ করা গেলে জমজমের পানি বিক্রি করতে কোনো বাধা নেই।

ইবনে কুদামা (রহ.) লিখেছেন, ‘কেউ যখন কোনো পাত্রে পানি সংগ্রহ করে, তখন সে সেটার মালিক হয়ে যায় এবং তা বিক্রি করা তার জন্য জায়েজ। এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে কোনো মতানৈক্য নেই। শহরের বিভিন্ন স্থানে পাত্রের ভেতর পানি বিক্রির প্রথা বহু আগে থেকেই চলে আসছে। কেউ এতে আপত্তি জানায়নি। কাউকে তার মালিকের অনুমতি ছাড়া সে পানি পান করতে, অজু করতে বা নিতে নিষেধ করা হয় না।

অনুরূপভাবে যদি কেউ তার কূপ বা সাধারণ কোনো কূপ থেকে বালতি বা চাকা (কূপ থেকে পানি তোলার জন্য ব্যবহৃত ঘূর্ণায়মান যন্ত্র) এর মাধ্যমে পানি তোলে, তবে যে পানি সে ওপরে তোলে, তা তার মালিকানাধীন এবং সে তা বিক্রি করতে পারবে। কারণ সে তা তার পাত্রে নিয়ে মালিকানা লাভ করেছে। ইমাম আহমদ (রহ.) বলেছেন : ‘নবী (সা.) শুধু কূপ ও ঝরনার বাড়তি পানি তার উৎসস্থলে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। আর মূল কূপ ও ঝরনা বিক্রি করা জায়েজ এবং যে তা ক্রয় করবে তার পানির ওপর সেই বেশি অধিকার রাখে।’ (আল-মুগনি : ৪/২১৫)

শাইখ ইবনে বাজ (রহ.) বলেছেন, ‘জমজমের পানি বিক্রি করা বা মক্কা থেকে তা বহন করে নিয়ে যেতে কোনো অসুবিধা নেই।’

(মাজমু ফাতাওয়া ইবনে বাজ : ১৬/১৩৮)

পানি বোতলজাত করে বিক্রি

‘যখন কেউ কূপ বা নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে তা কলস বা অন্য কোনো পাত্রে রাখে, তখন সেটি তার নিয়ন্ত্রণে আসে এবং সে এর মালিক হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে বিক্রি করা জায়েজ হয়। একইভাবে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করলেও তা ব্যক্তিগত মালিকানায় আসে এবং বিক্রি করা বৈধ হয়।’ (আল-ফাতাওয়াল হিন্দিয়া, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১২২)

অতএব ইসলামের দৃষ্টিতে ফিল্টার করা পানি বোতলজাত করে বাজারে বিক্রি করা বৈধ।

ওয়াসার পানি বিক্রির বিধান

জুবাইর ইবনু আওয়াম (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ রশি নিয়ে খড়ির আঁটি বেঁধে তা বিক্রি করে, এতে আল্লাহ তাআলা তার সম্মান রক্ষা করেন, এটা তার জন্য মানুষের কাছে ভিক্ষা চাওয়ার চেয়ে উত্তম! লোকজনের কাছে এমন চাওয়ার চেয়ে, যে চাওয়ায় কিছু পাওয়া যেতে পারে বা নাও পারে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৩৭৩)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, মানুষ যখন উন্মুক্ত কোনো জিনিস আয়ত্ত করে তখন সেটার মালিক হয়ে যায়। চাই সেটা লাকড়ি হোক, কিংবা পানি।

কাজেই নদী-নালা ও ভূগর্ভস্থ পানি পরিশোধিত করার দ্বারা মালিকানা সাব্যস্ত হয়। তাই এই পানি সরবরাহ করে অর্থ গ্রহণ করা অর্থাৎ কেনাবেচা বৈধ।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102