শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০২:২৩ পূর্বাহ্ন

পাঠকদের আস্থার ঠিকানা ‘উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরি’

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট টাইম: মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বই মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু। জ্ঞান অর্জনের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যমও বই। যুগের পর যুগ ধরে মানুষ বইয়ের মাধ্যমে জ্ঞান, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ অর্জন করে নিজেকে আলোকিত করেছে। আর এই বইগুলোকে পাঠকের নাগালের মধ্যে পৌঁছে দিতে এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে পাঠাভ্যাসে উৎসাহিত করতে যে প্রতিষ্ঠানটি নিরলস কাজ করে যাচ্ছে, সেটি হলো গ্রন্থাগার। উত্তরা অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য এমন এক জ্ঞানের বাতিঘর হয়ে উঠেছে উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরি, যা বইপ্রেমীদের জন্য যেন এক অভয়াশ্রম।
উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরির যাত্রা শুরু হয় ২০১৮ সালের ১লা জানুয়ারি। এটি উত্তরা ১০ নাম্বার সেক্টরের ১ নাম্বার রোডের ৪ নাম্বার বাসায় অবস্থিত। এই পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা হলেন—মোহাম্মদ তারেকউজ্জামান খান। উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরি শুধু একটি লাইব্রেরি নয়, বরং একটি সামাজিক আন্দোলনের নাম, একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রত্যয়ের নাম। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গ্রন্থাগারটি উত্তরার বিভিন্ন বয়স ও পেশার পাঠকের পাঠ-চাহিদা মেটাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই লাইব্রেরি শিশু, কিশোর, তরুণ, প্রবীণ—সবার জন্যই উন্মুক্ত। এখানে রয়েছে সাহিত্যের বিশাল ভাণ্ডার, শিক্ষামূলক ও গবেষণাধর্মী গ্রন্থ, সামাজিক উন্নয়ন ও আত্ম-উন্নয়নমূলক বই, ইসলামী সাহিত্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, ইতিহাস, দর্শনসহ নানা বিষয়ের সমৃদ্ধ সংগ্রহ।
বর্তমানে লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এই বিপুল সংগ্রহ পাঠকদের সামনে তুলে ধরছে এক নতুন জগত—যেখানে পাঠক হারিয়ে যেতে পারেন জ্ঞানের গভীরে। লাইব্রেরিটি খোলা থাকে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ জন পাঠক উপস্থিত থাকেন। লাইব্রেরিতে রয়েছে ৫০টি আসন। প্রতিটি কক্ষ রয়েছে সিসি ক্যামেরার আওতায়, রয়েছে আইপিএস সুবিধা, যাতে পাঠ কার্যক্রম কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই চলতে পারে।
গ্রন্থাগারকে বলা হয় জনগণের বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ এখানে বয়স, পেশা, অর্থনৈতিক বা সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে যে কেউ এসে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পান। উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরি এই ধারণাটিকেই বাস্তবে রূপ দিয়েছে। এটি শুধু বই পড়ার জায়গা নয়, বরং একটি প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক কেন্দ্র। লাইব্রেরির পাঠকরা এখানে এসে নিজেদের মনের মতো বই খুঁজে পান, শান্ত পরিবেশে পাঠচর্চা করতে পারেন এবং সময়োপযোগী বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ পান।
লাইব্রেরিটি নিজস্ব কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও নানা বিষয়ের বইয়ের মাধ্যমে জীবনব্যাপী শিক্ষাকে উৎসাহিত করা। তরুণ সমাজকে অপসংস্কৃতির করাল গ্রাস থেকে দূরে রাখতে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা। পাঠাভ্যাস গড়ে তোলা এবং সাহিত্য ও সৃজনশীলতার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা। শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা সহায়ক পরিবেশ তৈরি। সমাজ সচেতন, দায়িত্বশীল ও জ্ঞানপিপাসু নাগরিক গড়ে তোলার প্রয়াস।
বই শুধু পড়ার বস্তু নয়, আত্মার খাদ্য, বই শুধু তথ্য বা গল্প নয়, বই একটি জীবনবোধের প্রতিচ্ছবি। বইয়ের মধ্যে রয়েছে একটি জাতির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও স্বপ্ন। উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরি সেই স্বপ্নগুলোকে পাঠকের সামনে তুলে ধরছে। বইয়ের মাধ্যমে পাঠক সমাজ আত্মিক প্রশান্তি পাচ্ছেন, মননশীলতার বিকাশ ঘটাচ্ছেন, এবং ভবিষ্যতের একটি সুন্দর সমাজ গঠনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরি এখন কেবল বইয়ের সংগ্রহস্থল নয়; এটি হয়ে উঠেছে বইপ্রেমীদের এক আত্মিক আশ্রয়স্থল। যারা একান্তে কিছু সময় বইয়ের সঙ্গে কাটাতে চান, যারা মনকে শুদ্ধ করতে চান জ্ঞানের আলোয়, তাদের জন্য এই লাইব্রেরি যেন আশীর্বাদস্বরূপ।
শিশুদের জন্য রয়েছে ছড়া-কবিতা, রূপকথা, বিজ্ঞান কল্পকাহিনি; শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যপুস্তকের বাইরের জ্ঞানসমৃদ্ধ বই; আর বড়দের জন্য রয়েছে উপন্যাস, ইতিহাস, আত্মজীবনী, গবেষণাধর্মী বই।
লাইব্রেরির পরিবেশ এতোটাই মনোরম ও শান্তিপূর্ণ যে এখানে সময় কাটানো এক ধরনের মানসিক প্রশান্তির মাধ্যম হয়ে ওঠে। লাইব্রেরিটি বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় করে শিক্ষামূলক ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরির ভূমিকা কেবল পাঠচর্চার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবেও নিজেদের তুলে ধরেছে। প্রতি বছর গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি প্রদান, সেরা শিক্ষার্থী সংবর্ধনা, মুক্তিযোদ্ধা ও হাফেজে কোরআনের সম্মাননা, রত্নগর্ভা মা ও গর্বিত বাবাকে সম্মান জানানো, সেরা শিক্ষক ও গুণী সাহিত্যিকদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়ে থাকে। এ ধরনের আয়োজনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে আগ্রহ ও অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হয় এবং সমাজে মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধের প্রসার ঘটে।
উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরি ইতোমধ্যে একটি শক্তিশালী পাঠক গোষ্ঠী তৈরি করেছে। ভবিষ্যতে লাইব্রেরির বইয়ের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি পাঠকসেবার ক্ষেত্রেও আরও নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পরিকল্পনা রয়েছে। ডিজিটাল লাইব্রেরি সুবিধা, অনলাইন বুক রিজার্ভেশন, ই-বুক সেবা চালুর উদ্যোগ গ্রহণের ভাবনাও রয়েছে।
সেবার মানোন্নয়ন, আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এবং পাঠকদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরি হয়ে উঠতে চায় বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থাগার।
‘উত্তরা বই প্রেমীদের অভয়াশ্রম’এই বাক্যটি নিছক একটি শিরোনাম নয়, এটি একটি বাস্তব চিত্র। যে সমাজে বইয়ের কদর হারিয়ে যাচ্ছে, সেখানে উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরি বইয়ের প্রেম এবং জ্ঞানচর্চাকে টিকিয়ে রাখতে এক নিঃশব্দ বিপ্লব চালিয়ে যাচ্ছে। বইপ্রেমী, জ্ঞানপিপাসু এবং সৃজনশীল মানুষ তৈরির এই ধারাবাহিকতায় উত্তরা পাবলিক লাইব্রেরি সত্যিই হয়ে উঠেছে উত্তরার হৃদয়ে গেঁথে থাকা এক আলোর মশাল।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102