ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় প্রাণহানির মিছিল আরও দীর্ঘ হচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া অভিযানে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৬২ জনে। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬৯৭ জন। খবর আনাদোলু ও বিবিসির।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৯৮ জন নিহত এবং ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন। নিহত ও আহতদের প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে, কারণ বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন এবং উদ্ধারকর্মীরা পর্যাপ্ত সরঞ্জাম না থাকায় তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
অবরুদ্ধ গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতেও ফিলিস্তিনিদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে। ২৭ মে থেকে নিয়মিতভাবে খাদ্য ও সহায়তা নিতে যাওয়া মানুষের ওপর হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। সর্বশেষ বুধবার গুলিতে নিহত হয়েছেন ৭ জন এবং আহত হয়েছেন ৮৭ জন। এ নিয়ে ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫০৪ জনে এবং আহতের সংখ্যা ১৮ হাজার ৩৪৮ জনে।
একই সঙ্গে খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ সীমিত হওয়ায় গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অনাহার ও অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩২ জনে। এদের মধ্যে ১৪৬ জন শিশু। বুধবার একদিনেই ক্ষুধায় প্রাণ হারান আরও ৪ জন।
ইসরায়েলি বাহিনী সম্প্রতি গাজা সিটিতে নতুন করে স্থল অভিযান শুরু করেছে। মঙ্গলবার রাতভর বিমান হামলার পর ট্যাংক ও সেনারা শহরে প্রবেশ করে। এতে শহরের টেলিফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। লাখো মানুষ গাজা সিটি থেকে দক্ষিণ দিকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আইডিএফের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ ইতোমধ্যেই শহর ছেড়েছেন। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি।
কিন্তু দক্ষিণের শরণার্থী শিবিরগুলোও নিরাপদ নয়। খান ইউনিস, রাফাহ এবং আল-মাওয়াসি ক্যাম্পে হামলায় হতাশ হয়ে অনেকেই আবার গাজা সিটির দিকে ফিরে যাচ্ছেন। উপকূলীয় সড়কে পালানোর সময়ও বোমা হামলায় অসংখ্য প্রাণহানি ঘটেছে।
জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একাধিকবার গাজায় হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে মামলা চলছে। কিন্তু তারপরও গাজা উপত্যকায় হামলা থামছে না, আর প্রতিদিন লম্বা হচ্ছে মৃত্যু ও দুর্ভিক্ষের মিছিল।