বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৫০ অপরাহ্ন

আলোচিত ‘মাশরুম’ হত্যাকাণ্ডের সমাপ্তি, অপরাধীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

অনলাইন ডেক্স রির্পোট
  • আপডেট টাইম: সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
তিনজন অতিথিকে বিষাক্ত মাশরুম রান্না করে পরিবেশন করে হত্যা করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান নারী এরিন প্যাটারসন। দুই বছর আগে ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই এক দুপুরে খাবারের টেবিলে এ ঘটনা ঘটে। তিন আত্মীয়কে হত্যা এবং আরো একজনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দোষি সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি।আজ সোমবার এই হত্যার শাস্তি হিসেবে এরিন প্যাটারসনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার আদালত, যার মধ্যে ৩৩ বছর তাকে প্যারোল ছাড়া থাকতে হবে।এটি এমন একটি কাহিনীর সমাপ্তি, যা অস্ট্রেলিয়াজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে এবং এ ঘটনা নিয়ে একাধিক পডকাস্ট ও ডকুমেন্টারি তৈরি হয়েছে।সোমবারের শুনানিজুড়ে ৫০ বছর বয়সী এই নারী খুব একটা আবেগ প্রকাশ করেননি। বেশিরভাগ সময় তিনি চোখ বন্ধ রেখেছিলেন এবং বিচারক যখন তার সাজা পড়ে শোনাচ্ছিলেন তখনই চোখ খুলে রেখেছিলেন। এরিন প্যাটারসন বিষাক্ত মাশরুম খাইয়ে নিজের শ্বশুর, শাশুড়ি, চাচা এবং চাচীকে হত্যার দায়ে দোষি সাব্যস্ত হন গত জুলাই মাসে।২০২৩ সালের ২৯ জুলাই তিনি তার বাড়িতে সাবেক শ্বশুর ডন প্যাটারসন (৭০) ও শাশুড়ি গেইলে প্যাটারসন (৭০), গেইলের বোন হেথার উইলকিনসন (৬৬) ও হেথারের স্বামী স্থানীয় পাস্টর ইয়ান উইলকিনসনকে দুপুরের খাবারের দাওয়াত দেন। এরিন প্যাটারসনের সঙ্গে তার স্বামী সিমনের বিচ্ছেদ হয়েছিল। তবে তিনি তার শ্বশুর-শাশুড়ি, ডন (চাচা শুশুর) এবং গেইল প্যাটারসনের (চাচী শাশুরি) সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। স্থানীয় গীর্জার সেবা দেওয়ার সময় নিয়মিতভাবে তাদের সঙ্গে দেখা করতেন।ওইদিনের দুপুরের খাবারের দাওয়াতের বিশেষ কারণ উল্লেখ করা হয়নি। এরিন প্যাটারসন আদালতে বলেছিলেন, তিনি তার শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে চেয়েছিলেন। তার প্রাক্তন স্বামী সিমনকেও মধ্যাহ্নভোজের দাওয়াত দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যেতে পারেননি। তিনি প্রাক্তন স্ত্রীর বাড়িতে যেতে অস্বস্তিতে পড়েছিলেন।তাই শুধু তার বাবা-মা, চাচা এবং চাচী শনিবার খাবারের জন্য উপস্থিত হন এরিনের বাড়িতে।শনিবারের দুপুরে এই পাঁচজন একসঙ্গে লাঞ্চ খেতে বসেন। তাদের পরিবেশন করা হয় স্থানীয়ভাবে প্রসিদ্ধ খাবার বিফ ওয়েলিংটন। কিন্তু সেই খাবারে দেওয়া হয়েছিলো বিষাক্ত ডেথ ক্যাপ মাশরুম। ভিক্টোরিয়া রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় নিজের বাড়ির কাছ থেকে এরিন সংগ্রহ করেন ‘ডেথ ক্যাপ’ মাশরুম। এরপর তিনি রান্না করেন ‘বিফ ওয়েলিংটন’।এই খাবার খাওয়ার পর কিছু দিনের মধ্যেই চার অতিথির মধ্যে তিনজন মারা যান। চতুর্থ অতিথি ইয়ান হাসপাতালে কয়েক সপ্তাহ চিকিৎসার পর মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসেন। এ ঘটনায় খুব দ্রুতই এরিন হয়ে যান হত্যা মামলার প্রধান সন্দেহভাজন। একমাত্র বেঁচে থাকা ওই ব্যক্তি পাদরি ইয়ন উইলকিনসনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ২৫ বছরের সাজার আদেশ দেওয়া হয়েছে এরিন প্যাটারসনকে। ইলকিনসনের স্ত্রী হেদার এই মধ্যাহ্নভোজের পর হাসপাতালেই মারা যান। এরিন প্যাটারসনের শ্বশুর, ডন এবং গেইল প্যাটারসনও মারাত্মক গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল অসুস্থতার পর একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।মেলবোর্ন সুপ্রিম কোর্ট থেকে লাইভ সম্প্রচারিত এই শুনানির মাধ্যমে মামলাটি জনমনে ব্যাপক আগ্রহ হয়ে ওঠে। দেশটির বিশিষ্ট বিচারক ক্রিস্টোফার বিলে মামলার রায় দেন।তিনি বলেন, ‘প্যাটারসনের অপরাধগুলো পূর্ব পরিকল্পনার অংশ ছিল এবং তার মিথ্যাচারগুলো কাজে আসবে না বুঝতে পেরে অন্য কাহিনী বানাতে গিয়ে ধরা পড়েন।’ বিচারক আরো বলেন, ‘আপনি জুলাই ১৬, ২০২৩ তারিখে যখন অস্বাভাবিকভাবে প্রাক্তন স্বামী সিমনের বাবা-মা, চাচা-চাচিকে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তা ছিল একটি পরিকল্পিত হত্যার বাস্তবায়ন।’তিনি বলেন, ‘আপনার অপরাধগুলো আপনার নিজের সন্তানদের ওপর অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে প্রভাব ফেলেছে, যারা তাদের দাদু-দাদিকে হারিয়েছে।’১০ সপ্তাহের বিচারকাজের সময় জানা যায়, প্যাটারসন একটি ওয়েবসাইট থেকে ‘ডেথ ক্যাপ’ মাশরুম সম্পর্কে খবর নেন। প্রসিকিউটররা জানান, তিনি মাশরুম শুকানোর জন্য একটি ডিহাইড্রেটর কিনেছিলেন এবং অতিথিরা হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করার পর সেটি তিনি ফেলে দেন। তবে প্যাটারসন পুলিশকে জানিয়েছিলেন, তিনি একটি বড় সুপারমার্কেটের এশিয়ান দোকান থেকে মাশরুম কিনেছিলেন। যার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।প্যাটারসন জনসমক্ষে প্রাক্তন স্বামীর পরিবারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখার দাবি করতেন। কিন্তু ফেসবুকে তিনি তার শ্বশুর-শাশুড়ির আচরণ ও বিশ্বাস নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ফেসবুকে পাঠানো বার্তাগুলোতে প্যাটারসন তার শ্বশুর-শাশুড়ির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। কারণ, স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হওয়ার সময় তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। প্যাটারসনের আইনজীবীরা দাবি করেছিলেন, তিনি ভুলক্রমে সংগ্রহ করা মাশরুম খাবারের মধ্যে মিশিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পারেননি তার অতিথিরা হাসপাতালে পৌঁছে চিকিৎসা নেওয়ার পরও মৃত্যুবরণ করবেন। ছয়দিন ধরে বিচারপতি ও বিচারকদের আলোচনার পর ১২ সদস্যের জুরি এরিন প্যাটারসনকে দোষি সাব্যস্ত করেন। যদিও আদালতে প্যাটারসনের আইনজীবীরা দাবি করেছিলেন যে, তিনি নির্দোষ। অস্ট্রেলিয়ায় জুরি সদস্যদের পরিচয় গোপন রাখা হয় এবং জুরি কক্ষে যেসব আলোচনা হয় তা প্রকাশ করা হয় না। ফলে কখনোই পরিষ্কার হবে না কী কারণে ১২ জন জুরি সদস্য একমত হয়ে প্যাটারসনের বিরুদ্ধে রায় দিলেন।সোমবার আদালতের বাইরে বেঁচে থাকা ইয়ন উইলকিনসন পুলিশ কর্মকর্তাদের ‘পেশাদার, দক্ষ এবং কার্যকর তদন্তের জন্য’ ধন্যবাদ জানান। কোরাম্বুরা ব্যাপটিস্ট চার্চের দীর্ঘকালীন পাদরি উইলকিনসন প্রসিকিউটর, চিকিৎসাকর্মী ও কমিউনিটির সদস্যদেরও ধন্যবাদ জানান, যারা তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি গোপনীয়তা রক্ষা করার আহ্বান জানান এবং সবাইকে একে অপরের প্রতি সদয় হতে উৎসাহিত করেন।এরিন প্যাটারসনের কাছে তার সাজা বা দোষি সাব্যস্ত হওয়ার বিরুদ্ধে আপিল করার সময় রয়েছে আগামী ৬ অক্টোবর মধ্যরাত পর্যন্ত। অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের ছোট শহর মর্লোলে প্যাটারসনের এই বিচার বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102