বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ:

ইসলামে ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখার গুরুত্ব

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম: সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
মুসলমানদের মধ্যে পরস্পর ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখা অন্যতম ইবাদত। এটা মহান আল্লাহ প্রদত্ত বিধান। মুসলমানদের উচিত সার্বক্ষণিক এই ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করা, কখনো কারো মধ্যে মতভেদ দেখা দিলে অন্যদের দায়িত্ব হয়ে যায় তা মীমাংসা করে দেওয়া; যাতে কোনোভাবেই মুসলমানদের ভ্রাতৃত্ব বিনষ্ট না হয়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপস- মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১০)এই আয়াতটি গোটা মুসলিম উম্মাহকে বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করে। কোনো আলেমের মতে, মুসলমানদের ধর্মীয় বন্ধনে ক্ষেত্রবিশেষে রক্তের বন্ধনের চেয়েও শক্তিশালী।এ জন্য রাসুল (সা.) হিজরতের পর মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার সময় ভ্রাতৃত্বকে ঈমানি বন্ধন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন, যাতে ভিন্ন ভিন্ন গোত্র, জাতি ও উৎস থেকে আসা মুসলিমরা এক ছাতার নিচে একত্র হতে পারে। এর বাস্তব রূপ ছিল মুহাজির ও আনসারের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করে দেওয়া। পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে শরিয়তের নির্দেশনাগুলো এ বিষয়কে আরো সুদৃঢ় করেছে। বিদায়ি হজে রাসুল (সা.) আবারও ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ও তার দাবিদাওয়ার ওপর জোর দেন।সেদিন রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের রক্ত, তোমাদের ধন-সম্পদ, তোমাদের ইজ্জত-সম্মানে হস্তক্ষেপ তোমাদের ওপর হারাম, যেরূপ তোমাদের এ দিনে এই শহরে ও এই মাসে হারাম। জেনে রেখো! অপরাধীই অপরাধ কর্মের জন্য দায়ী ও দোষী। ছেলের অপরাধের জন্য বাবা এবং বাবার অপরাধের জন্য ছেলে অপরাধী নয়। জেনে রেখো! এক মুসলিম অন্য মুসলিমের ভাই। কাজেই এক মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের ওই জিনিসই হালাল, যা সে স্বেচ্ছায় তার জন্য হালাল করে (দান করে)…।’(তিরমিজি, হাদিস : ৩০৮৭)
ইসলামে ভ্রাতৃত্বের অধিকারইসলাম ভ্রাতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত অধিকারগুলোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এগুলো দুই প্রকার : সাধারণ ও বিশেষ।

১. সাধারণ অধিকার

সালাম প্রচার করা ও উত্তর দেওয়া। (সুরা : নিসা, আয়াত : ৮৬)

অসুস্থকে দেখতে যাওয়া। (তিরমিজি, হাদিস : ১০১৭)

জানাজায় অংশ নেওয়া। (তিরমিজি, হাদিস : ১০১৭)

দাওয়াত গ্রহণ করা। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৬০)

অঙ্গীকার পূর্ণ করা। (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৪)

হাঁচি দিলে উত্তর দেওয়া। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৫২১)

মজলুমকে সাহায্য করা। (বুখারি,

হাদিস : ৫১৭৫)

বিপদগ্রস্তকে সহায়তা করা। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৫)

অন্যের দোষত্রুটি অনুসন্ধান না করা।

(সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১২)

ঋণে জর্জরিতের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া। (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৮০)

কারো প্রতি জুলুম বা অবজ্ঞা না করা। (তিরমিজি, হাদিস : ৩০৮৭)

ইত্যাদি।

২. বিশেষ অধিকার

ব্যক্তিগত কারণে তিন দিনের বেশি সম্পর্কচ্ছেদ না করা। (বুখারি, হাদিস : ৬০৭৩)

যেকোনো অবস্থায় অন্যকে সাহায্য করা।

(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৫)

তাদের খোঁজখবর রাখা।

(তিরমিজি, হাদিস : ১৪২৬)

প্রয়োজন মেটানো। (তিরমিজি, হাদিস : ১৪২৬)

গীবত না করা বা দোষ প্রকাশ না করা।

(সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১২)

ক্ষমাশীল হওয়া। (সুরা : নূর, আয়াত : ২২)

পরামর্শ গ্রহণ করা ও দেওয়া।

(সুরা : শুরা, আয়াত : ৩৮)

সৎ কাজে আদেশ করা এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখা।

(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১০) ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, বিশেষ অধিকারগুলো সাধারণ অধিকারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত অপর মুসলমানের অধিকারগুলো সংরক্ষণে যত্নবান হওয়া, পরস্পর ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখা।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102