গাজা উপত্যকায় মানবিক বিপর্যয় আরও ঘনীভূত হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে খাবার সংগ্রহের চেষ্টায় ছুটে আসা ক্ষুধার্ত জনতার ভিড়ের ওপর উল্টে পড়ে একটি ত্রাণবাহী ট্রাক। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান অন্তত ২৫ জন। আহত হন আরও অনেকে। বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী দিনটি ছিল বুধবার (৬ আগস্ট)।
গাজা সিভিল ডিফেন্স ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, অবরুদ্ধ গাজায় খাদ্য সংকট এত তীব্র যে, ট্রাক আসার খবর শুনে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে সেগুলোর দিকে। কেউ কেউ উঠে পড়েন গাড়ির ওপর। নিয়ন্ত্রণ হারানো এক চালকের ট্রাক উল্টে পড়ে অপেক্ষমাণ জনতার ওপর। দুর্ঘটনাটি ঘটে এক ঝুঁকিপূর্ণ ও অসম রাস্তায়, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী চালকদের ত্রাণ নিতে বাধ্য করছিল বলে অভিযোগ স্থানীয় কর্তৃপক্ষের।
দুর্ঘটনার দিনেই গাজার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন আরও অন্তত ২৪ জন। দক্ষিণ গাজার রাফাহ, মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবির, গাজা শহর ও দেইর আল-বালাহ এলাকায় এসব হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছে নারী, শিশু ও এক ছয় মাস বয়সী শিশুও।
আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই দিন অপুষ্টিজনিত কারণে মারা গেছেন আরও তিনজন—এক শিশু, এক নবজাতক এবং একজন প্রাপ্তবয়স্ক।
অক্টোবর ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত গাজায় অপুষ্টি ও অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৮৮ জন, যাদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, গাজায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ও মহামারির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
অবরোধের কারণে ত্রাণ প্রবেশে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে প্রতিদিন ছয় হাজার ট্রাকের প্রয়োজন, সেখানে ২৭ জুলাই থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত ১১ দিনে প্রবেশ করেছে মাত্র ৮৪৩টি ত্রাণবাহী ট্রাক।
ফিলিস্তিনি পরিসংখ্যান বলছে, ২৭ মে থেকে যুক্তরাষ্ট্র-চালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশপাশে ত্রাণ সংগ্রহের চেষ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৫৬৮ জন এবং আহত হয়েছেন ১১ হাজারের বেশি মানুষ।
চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও খাদ্যাভাবের মধ্যে গাজা এখন চূড়ান্ত মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে।