এক সময় দুই অঙ্ক ছুঁয়ে থাকা মুদ্রাস্ফীতি এখন তিন বছর পর প্রথমবারের মতো ৯ শতাংশের নিচে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের এক বছর পেরিয়ে এসে দেশের অর্থনীতিতে ফিরেছে স্বস্তির নিঃশ্বাস। অন্তর্বর্তী সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং মুদ্রানীতির বিচক্ষণতার ফলেই এ পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে— বলছেন অর্থনীতিবিদরা।
গত বছরের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। এর আগে দেশে ছিল চরম অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা। সরবরাহ ব্যবস্থায় বিপর্যয়, মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় অসহনীয় করে তোলে সাধারণ মানুষের জীবন।
২০২৪ সালের জুনে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৪.১০ শতাংশ এবং সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি পৌঁছেছিল ১১.৬৬ শতাংশে— যা এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে ২০২৫ সালের জুনে তা নেমে আসে ৮.৪৮ শতাংশে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়ায় ৭.৩৯ শতাংশে— গত দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও নিয়ন্ত্রিত বাজেট ঘাটতির মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংকিং খাতকে স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছে। বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৪ শতাংশের নিচে রাখা এবং এডিপির আকার সীমিত করাও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রেখেছে।
অর্থনীতিবিদ ড. মনজুর হোসেন মনে করেন, চালের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে এখনো উদ্বেগ রয়ে গেছে। মে-জুনে খাদ্য মূল্যস্ফীতির প্রায় ৫০ শতাংশই এসেছে চাল থেকে, যদিও বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত। তিনি বলেন, চালের দাম না কমলে মুদ্রাস্ফীতির সুফল সীমিত হয়ে পড়বে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অনুকূল আবহাওয়া, স্থিতিশীল বিনিময় হার এবং দক্ষ মুদ্রানীতির কারণে মূল্যস্ফীতি হ্রাস সম্ভব হয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই কৌশল ধরে রাখা গেলে আগামী মাসগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি আরও কমবে।
এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, সরকারের বাজার নজরদারির কার্যকর উদ্যোগের ফলে সাধারণ মানুষ তুলনামূলকভাবে স্বস্তি অনুভব করছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, মুদ্রাস্ফীতি কমে এলেও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো না গেলে নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠী এখনও ঝুঁকিতে থাকবে।
ফ্যাসিবাদ পতনের এক বছর পর, বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে— এমনই আশাবাদী বার্তা দিচ্ছে সাম্প্রতিক এই পরিসংখ্যান।