বাংলাদেশে আলোচিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির প্রাক্কালে আন্দোলনের সফলতা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে উত্তপ্ত বিতর্ক। ২০২৪ সালের এই গণ-আন্দোলনে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ শাসনের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলেও, এখনো নির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা হয়নি।
এমন এক প্রেক্ষাপটে, আন্দোলনের কৃতিত্ব কার—তা ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শুরু হয়েছে কথার লড়াই ও দখলদারিত্বের প্রতিযোগিতা। কেউ দাবি করছে, এই অভ্যুত্থানের পরিকল্পনায় ছিল ইসলামী ছাত্রশিবির; অন্যদিকে, এনসিপি ও প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো এমন দাবিকে ‘মিথ্যাচার’ আখ্যা দিয়ে উল্টো প্রশ্ন তুলেছে—আসল নেতৃত্বকে পরিকল্পিতভাবে ছোট করা হচ্ছে কি না।
এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম ও সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরের বক্তব্যকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে চলছে বিতর্ক। সাংবাদিক কেফায়েত শাকিলের দাবি, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট রাতে গণভবন দখলের পরিকল্পনায় শিবির নেতা সিবগাতুল্লাহ যুক্ত ছিলেন। তাঁর ভাষায়, “সরকার পতন তখন সময়ের ব্যাপার ছিল।”
অন্যদিকে, বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘মিডিয়া ট্রায়ালের’ মাধ্যমে অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব জামায়াত-শিবিরের ঘরে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। এতে গণ-আন্দোলনের প্রকৃত নেতৃত্বকে পেছনে ঠেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক মেরুকরণ ত্বরান্বিত হচ্ছে।
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারমূলক পদক্ষেপ সত্ত্বেও ‘জুলাই সনদ’ প্রকাশ না হওয়া এবং নির্বাচনের দিনক্ষণ নির্ধারণে অনিশ্চয়তা জনগণের মধ্যে হতাশা বাড়াচ্ছে। একইসঙ্গে মাঠে নেমেছে একাধিক নতুন সংগঠন ও সরকারি খাতের কর্মচারীরা, যার ফলে রাজনীতির নতুন রূপরেখা স্পষ্ট হচ্ছে।
জনমনে আরেকটি উদ্বেগের নাম হয়ে উঠেছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতা রিয়াদের চাঁদাবাজি অভিযোগে গ্রেপ্তার ও এর জের ধরে সামাজিক মাধ্যমে একে কেন্দ্র করে যে ধারা তৈরি হয়েছে, তা স্পষ্টতই আন্দোলনের পরবর্তী রাজনীতিতে একটি নতুন পালা সূচিত করছে।
শেষ কথা, ‘জুলাই আন্দোলনের সফলতা কার ঘরে যাবে?’—এই প্রশ্নই এখন দেশের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু।