বাংলাদেশের মৎস্য খাতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের মাছ উৎপাদন ৫০ লাখ ১৮ হাজার টনে পৌঁছেছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের উৎপাদন এখনো চূড়ান্ত হয়নি, তবে তা আগের বছরের চেয়ে আরও বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO)-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মিঠাপানির মাছ আহরণে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে। ইলিশ উৎপাদনে দেশটি আগেই বিশ্বসেরা স্থান ধরে রেখেছে — ২০২৩-২৪ সালে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ২৯ হাজার টন।
পুকুরে মাছ চাষ বাংলাদেশের মাছ উৎপাদনের ৫৬% জোগান দিচ্ছে, যা গত তিন দশকে ছয় গুণ বেড়েছে। মোট ৪৭ লাখ হেক্টর জলাশয়ে মাছ আহরণ হয়েছে, যার মধ্যে ২৯ লাখ ৭৮ হাজার টন চাষের এবং ১৪ লাখ ১১ হাজার টন উন্মুক্ত জলাশয় থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
মাছ উৎপাদনের এই অগ্রগতি শুধু পরিসংখ্যানেই সীমাবদ্ধ নয়—এটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি, অর্থনীতি ও রপ্তানি আয়ের গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। বর্তমানে প্রায় দুই কোটি মানুষ, যার মধ্যে ১৪ লাখ নারী, মৎস্য খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রায় ৭৭ হাজার টন মাছ ও মৎস্য পণ্য রপ্তানি করে ৪০০ কোটিরও বেশি টাকা আয় করেছে। তেলাপিয়া উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ এবং এশিয়ায় তৃতীয়।
সরকারি ১১৩টি হ্যাচারি আধুনিকায়নে ৩৭২ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, যা চলবে ২০২৮ সাল পর্যন্ত। দেশি জাত সংরক্ষণ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং মৎস্যবান্ধব নীতিমালার ফলে এই ধারাবাহিক অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়মতো পদক্ষেপ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে বিশ্বমঞ্চে আরও শক্তিশালী অবস্থান নিতে সক্ষম হবে।