বোরো মৌসুম প্রায় শেষ হলেও চালের বাজারে স্বস্তি নেই। বরং কয়েক দফায় দাম বেড়েছে। কৃষক থেকে ব্যবসায়ী—সকল মহলে অস্থিরতা। কেউ দুষছেন উৎপাদন খরচকে, কেউ মিলারদের কারসাজিকে।
রাজধানীর আড়ৎগুলো ঘুরে দেখা গেছে, মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা, আটাশ ৬৫ টাকা এবং ভালো মানের মিনিকেট-নাজিরশাইলের দাম কেজিপ্রতি ৮৫-৯০ টাকা পর্যন্ত। ৫০ কেজির বস্তায় দাম বেড়েছে ৩৫০-৫০০ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, মিলারদের কাছ থেকে চাহিদা অনুযায়ী চাল মিলছে না, যা মিলছে তাও বাড়তি দামে। কারওয়ান বাজার ও উত্তর বাড্ডায় চালের বড় বড় ব্র্যান্ড যেমন ডায়মন্ড, মোজাম্মেল, রসিদ—সবই বিক্রি হচ্ছে উচ্চ দরে। মিলারদের দিকেই অভিযোগ ব্যবসায়ীদের: উৎপাদন বেশি হলেও বাজারে দাম বাড়ছে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে।
পরিকল্পনা কমিশনের জুলাই রিপোর্ট বলছে, অন্য পণ্যের তুলনায় চালের দাম না কমায় মূল্যস্ফীতিতে বাড়তি চাপ পড়েছে। জুনে চাল মূল্যস্ফীতি ছিল ১৫ শতাংশ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, এ বছর বোরো আবাদ হয়েছে ৫০ লাখ হেক্টরে, লক্ষ্যমাত্রা ২.২৬ কোটি টন। তবে মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারের দাম, সেচ, ও ডিজেল খরচ বেড়ে উৎপাদন ব্যয় প্রতি কেজিতে ৩০ টাকা ছাড়িয়েছে। কৃষকরা বলছেন, মিলারদের নির্ধারিত দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে ধান।
বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠিসহ দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের অভিযোগ—বৈরী আবহাওয়া নয়, আসল সংকট সার ও সেচের খরচ এবং মজুতদারির খেলায়। উৎপাদক দাম না পেলেও ভোক্তা কিনছে উচ্চমূল্যে।
সরকার নির্ধারিত দামে ধান ও চাল সংগ্রহ চলছে। চলতি মৌসুমে ৩ লাখ টন ধান এবং ১৪ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্য। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। তবে ভোক্তা সংগঠন ক্যাব মনে করে, আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও ব্যবসায়ীরা চাল আমদানি করেন না—কারণ তাদের কাছে মজুত চাল রয়েছে।
ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, “মূল সমস্যা নজরদারির অভাব ও অসাধু মিল মালিকদের দৌরাত্ম্য। বছরের পর বছর একই চিত্র।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উৎপাদন, সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণের প্রতিটি ধাপে কঠোর নজরদারি এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করলেই চালের বাজারে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তা না হলে উৎপাদনের বাইরে কৃত্রিম সংকটই চালের বাজারে অস্থিরতা জিইয়ে রাখবে।