তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের বিতর্কিত রায়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকা দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক এবার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হত্যামামলায় গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে গেলেন। রাজনৈতিক প্রভাবে বেআইনি রায়, বিচারব্যবস্থার অপব্যবহার এবং জাল রায় তৈরির অভিযোগে তিনি বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি।
বুধবার (৩০ জুলাই) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত শাহবাগ থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় খায়রুল হকের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ জানায়, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের আসনে বসে তিনি রাজনৈতিক প্ররোচনায় বেআইনি রায় দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ধ্বংস করেছেন।
২০১১ সালের ১০ মে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণার রায় দিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন সরকারপ্রধানের ইচ্ছায় এবং ভবিষ্যত পদায়নের আশায় তিনি রায়টি ‘ফেব্রিকেট’ করেন। রাষ্ট্রপক্ষের মতে, তার সেই রায় থেকেই ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণহত্যার পথ তৈরি হয়।
খায়রুল হককে গত ২৪ জুলাই ধানমন্ডির নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। একইদিনে তাকে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের একটি মামলায় অভিযোগ রয়েছে, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে রায়ের ভাষা বদলে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন।
এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে প্লট গ্রহণ সংক্রান্ত একটি অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু করেছে।
খায়রুল হক ২০১০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পান। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগের পতনের পর তিনি পদত্যাগ করেন।
বিচার বিভাগের শীর্ষস্থানে থেকে নেয়া সিদ্ধান্তের জন্য আজ তিনি কাঠগড়ায়। তার বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হলে তা দেশের বিচারব্যবস্থায় জনআস্থার নতুন অধ্যায় সূচিত করতে পারে—এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।