স্বজনদের অশ্রু ঝরিয়ে বিদায় নিল রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সাহীল ফারাবী আয়ান (১৪)। যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ হওয়া সাহিল মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে গত রোববার (২৭শে জুলাই) দিবাগত রাত পৌনে দুইটায় রাজধানীর জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে মারা যায়।
সোমবার (২৮শে জুলাই) দুপুরে তাঁর লাশ নানাবাড়ি নবাবগঞ্জের সোনাহাজরায় পৌঁছলে স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাঁকে একনজর দেখতে ভিড় করে। এরপর বাদ জোহর জানাজা শেষে সোনাহাজরা কবরস্থানে দাফন করা হয় সাহীলকে। সাহীলের নানার নাম মাওলানা বোরহান উদ্দিন। তিনি সোনাহাজরার বাসিন্দা। সাহীলের বাবা মোহাম্মদ আলী ও মা তামান্না মনজুরে খুদা রূপালী ব্যাংকে চাকরি করেন। থাকেন মিরপুরে। দুই সন্তানের মধ্যে সাহীল ছিল তাঁদের একমাত্র ছেলে।
দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, লাশবাহী গাড়ির চারপাশে স্বজনরা ঘিরে সাহীলের মরদেহ দেখছেন। পরে সোনাহাজরা নানার বাড়ির কাছে একটি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করেই স্থানীয় অনেক বাসিন্দা জানাযায় অংশ নেয়। দাফন শেষে পরিবারের লোকজন সোনাহাজরা মাদ্রাসার পাশে এক স্বজনের বাড়িতে বিশ্রাম নেন। কোনো কথা বলছিলেন না সাহীলের মা–বাবা। শুধু কাঁদছিলেন। এস এম জুনায়েদ হাসান নামের এক স্বজন বলেন, একমাত্র ছেলে সাহীলকে হারিয়ে তার মা–বাবা নির্বাক। দুই ভাই–বোনের মধ্যে সাহীল ছিল বড়।
বিমান বিধ্বস্তের খবর পেয়েই সাহীলের মা–বাবা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ছুটে যান। কিন্তু তাঁরা সাহীলকে না পেয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যমতে কয়েকটি হাসপাতালে ছেলের সন্ধানে নামেন। এরপর ঢাকার জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে গিয়ে সাহীলকে দগ্ধ অবস্থায় পান। এরপর এক সপ্তাহ নির্ঘুম রাত মা–বাবা ও আত্মীয়স্বজনদের কাঁদিয়ে গতকাল রাতে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) মারা যান সাহীল। ছেলেকে বাঁচাতে না পেরে সবাই শোকে পাথর।
বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান জানান, সাহীলের শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। জটিল অবস্থায় তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়।
২১ জুলাই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী।