বাংলাদেশের মৎস্য খাত আজ জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। পুষ্টি সরবরাহ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে এ খাতের অবদান অসামান্য। আন্তর্জাতিক পরিসরেও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে—বিশ্বে ইলিশ আহরণে শীর্ষস্থান, তেলাপিয়ায় চতুর্থ, এবং মিঠা পানির মাছ আহরণে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশটি।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বদ্ধ জলাশয়ে মাছচাষে বাংলাদেশ পঞ্চম, চিংড়ি-কাঁকড়া আহরণে অষ্টম এবং সামুদ্রিক মাছ আহরণে ১৪তম স্থানে রয়েছে। মৎস্যপণ্য রফতানিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রায় ৯০ হাজার টন পণ্য রফতানি করে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়েছে।
সরকারের বাস্তবমুখী নীতিমালা, আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ এবং জনগণের অংশগ্রহণে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়, পুকুর-হাওর ও সমুদ্রসীমায় মাছ উৎপাদন বেড়েছে। দেশের বার্ষিক মাছ উৎপাদন এখন ৫০ লাখ টনের বেশি, মাথাপিছু প্রাপ্যতা দৈনিক ৬৭.৮০ গ্রাম—যা খাদ্য নিরাপত্তায় ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়।
ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ পেয়েছে বড় সাফল্য। Hilsa Fisheries Management Action Plan বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০২৫ মৌসুমে ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫.৪৫ লাখ টন। চলতি মৌসুমে ইতোমধ্যেই ৪৬ হাজার টনের বেশি ইলিশ আহরিত হয়েছে। সরকার ৬৬৯টি অভয়াশ্রম চালু করেছে, যা প্রাকৃতিক প্রজনন ও মাছের বংশবৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা রাখছে।
জেলেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন সহায়তা কার্যক্রম, যেমন—ভিজিএফ চাল বিতরণ, বিকল্প কর্মসংস্থান, সহজ ঋণপ্রাপ্তির উদ্যোগ—টেকসই জীবিকা নিশ্চিত করছে। পাশাপাশি মৎস্য গবেষণায় উদ্ভাবিত হয়েছে বিলুপ্তপ্রায় ৪১ প্রজাতির মাছের কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি ও ১১০ প্রজাতির জিন ব্যাংক, যা দেশের মৎস্যসম্পদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার খাঁচায় মাছ চাষ, মিশ্র চাষ, কাঁকড়া-চিংড়ি চাষসহ বিভিন্ন অভিযোজনমুখী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। Marine Protected Area ঘোষণা, গবেষণা জাহাজ “RV মীন সন্ধানী” ও আন্তর্জাতিক জরিপ জাহাজ “RV Dr. Fridtjof Nansen”-এর মাধ্যমে সমুদ্রসম্পদের জরিপ ও টেকসই ব্যবস্থাপনা চালু রয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা ও সময়োপযোগী পরিকল্পনার ফলে বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে উদ্বৃত্ত দেশের তালিকায় উঠে এসেছে। এ সাফল্য দেশের পুষ্টি নিরাপত্তা, রফতানি সম্ভাবনা ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী ভিত্তি প্রদান করছে।