নাটোরের উত্তরা গণভবনের ডাবলডায়াল ঘড়ি – এক নীরব ঐতিহ্য। নাটোর শহরের উত্তরে অবস্থিত প্রাচীন স্থাপত্যকলার এক অপরূপ নিদর্শন উত্তরা গণভবন। প্রাসাদে প্রবেশের আগেই চোখে পড়ে দৃষ্টিনন্দন বিশাল সিংহদুয়ার, আর তার ওপরে স্থাপন করা হয়েছে এক ঐতিহাসিক ডাবলডায়াল ঘড়ি, যা প্রায় দুইশ বছর ধরে নির্ঘুম সময়ের ঘণ্টাধ্বনি বাজিয়ে যাচ্ছে।
১৭০৬ সালে রানী ভবানীর বিশ্বস্ত দেওয়ান দয়ারাম রায় এই রাজবংশের ভিত্তি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে রাজা প্রমদানাথ রায়ের আমলে ১৮৯৭ সালের প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে ধ্বংস হওয়া প্রাসাদটি ১১ বছরের দীর্ঘ পরিশ্রমে মুঘল ও পাশ্চাত্য নকশায় পুনর্নির্মাণ করা হয়। এই সময়ে ইতালির ফ্লোরেন্স থেকে আনা হয় এই ডাবলডায়াল ঘড়িটি, যা আজও সময় নির্দেশ করে চলে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে।
একসময় এই ঘড়ির ঘণ্টাধ্বনি ১৩ কিলোমিটার দূর ছাতারভাগ গ্রাম থেকেও শোনা যেত। যদিও সময়ের পরিক্রমায় তা স্তিমিত হয়ে এসেছে, তবে ঘড়িটি আজও সচল। গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে মেরামতের পর আবারো চালু হয় এই শতাব্দীপ্রাচীন যন্ত্র।
১২৫ বিঘা জমির ওপর নির্মিত দিঘাপতিয়া রাজপ্রাসাদ পরে হয়ে ওঠে উত্তরা গণভবন। ১৯৭২ সালে এটিকে গভর্নর হাউস থেকে উত্তরা গণভবন হিসেবে নামকরণ করা হয়। একসময় এখানে মন্ত্রিসভার বৈঠকও অনুষ্ঠিত হতো। এখন প্রাসাদসংলগ্ন অংশ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। রয়েছে সংগ্রহশালা, মিনি চিড়িয়াখানা, ইটালিয়ান গার্ডেন ও শতাধিক বছরের পুরনো কামান।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখতে এসেছেন প্রায় ৩ লাখ দর্শনার্থী, যার মধ্যে ১৪৩ জন ছিলেন বিদেশি। প্রবেশমূল্যে এবং পার্কিং বাবদ আয় হয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকা।
নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন জানিয়েছেন, উত্তরা গণভবনের স্থাপত্য ও ঐতিহ্য রক্ষায় একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হচ্ছে, যা বাস্তবায়িত হবে বিশেষজ্ঞ মতামতের ভিত্তিতে মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনায়।
প্রাচীন ইতিহাস, রাজকীয় শৌর্য আর নান্দনিক নকশার এক অনবদ্য মিশ্রণ উত্তরা গণভবনের ডাবলডায়াল ঘড়ি। এটি কেবল একটি যন্ত্র নয়, বরং এক সজীব নিদর্শন – সময়কে পরিমাপ করার পাশাপাশি যুগের ইতিহাসকে বহন করে চলা নীরব এক স্মারক।