সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার এবং তিন দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে রোববার (২৮শে জুলাই-২০২৪) সারাদেশে পালিত হয় গ্রাফিতি, দেয়াল লিখন ও গণসংযোগ কর্মসূচি। রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরের দেয়ালে আঁকা হয় আগুনঝরা প্রতিবাদের চিত্র ও বার্তা—“সোনার বাংলা আজ মৃত্যুপুরী কেন?”, “আমার ভাইদের মারলি কেন?”, “৫২ দেখিনি, ২৪ দেখেছি”, “সম্পদের হিসাব পরে, লাশের হিসাব আগে”।
বুয়েটে কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের বাধায় চারুকলার শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি শেষ করতে পারেননি। জব্দ করা হয় তাদের রং-তুলিও। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শাবিপ্রবি, ইস্ট-ওয়েস্টসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও দেয়াল লিখন চলে পুরোদমে।
অন্যদিকে, আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকে গোয়েন্দা হেফাজতে রেখে ভিডিও বার্তায় কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ। একইভাবে আটক করা হয় নুসরাত তাবাসসুমকে; অভিযোগ অনুযায়ী, মিরপুরের বাসা ভেঙে ডিবি সদস্যরা তাকে তুলে নেয়।
গোয়েন্দা হেফাজতে থাকা সমন্বয়কদের সঙ্গে পরিবারের দেখা করতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে তাদের সামনে খাবার দিয়ে তোলা ছবি রাতেই ভাইরাল হয়।
এদিকে, ঢাবি, জাহাঙ্গীরনগরসহ দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ সমাবেশে নামে। ২৯ জুলাই আবারও রাজপথে ফেরার ঘোষণা দেন তারা। ছাত্র সমাজ জানায়, ৯ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
অন্যদিকে, সরকার জানিয়েছে, সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১৪৭ জন নিহত, গ্রেপ্তার ১০,০২৮ জন। ঢাকায় মামলার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২২৯, গ্রেপ্তার ২,৭৬৪।
আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, সহিংসতা দমনে ‘গুলির নির্দেশ’ নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও সহিংসতা ও ‘অপপ্রচারের’ বিরুদ্ধে সতর্ক অবস্থানের কথা জানানো হয়।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজারবাগ ও বিএসএমএমইউ-তে আহতদের দেখতে যান এবং গণভবনে নিহতদের পরিবারকে অর্থ সহায়তা দেন।
বাম গণতান্ত্রিক জোট, ফ্যাসিবাদবিরোধী মোর্চা ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আন্দোলনে হতাহতদের তালিকা প্রকাশ ও বিচার দাবি করেছে।
দেশজুড়ে বিরাজ করছে টানটান রাজনৈতিক উত্তেজনা—প্রতিবাদের রং এখন দেয়াল পেরিয়ে জেগে উঠছে রাজপথেও।