দিনটি ছিল ২০২৪ সালের ২৬ জুলাই, শুক্রবার—দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের উত্তাল দিন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে টাঙ্গাইলসহ সারাদেশে। আন্দোলন দমনে সরকার এলাকায় এলাকায় চালায় ‘ব্লক রেইড’। টাঙ্গাইলেও চলে সাঁড়াশি অভিযান। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে।
সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল হলেও নগর ছিল স্তব্ধ। নিরালা মোড়, প্রেসক্লাব, বাসস্ট্যান্ড, কাগমারি মোড়সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মোতায়েন হয় র্যাব, পুলিশ, ডিবি ও বিজিবি। শহরতলীর প্রতিটি কোণে চলে চিরুনি অভিযান। পুলিশের লাঠিচার্জ, তল্লাশি ও গ্রেপ্তারে সাধারণ মানুষ ও আন্দোলনকারীরা গা ঢাকা দেয়।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফোরকান হোসেন ও মনিরুল ইসলাম জানান, পুলিশি তাণ্ডব ও প্রশাসনিক রোষের মাঝেও তারা লুকিয়ে আন্দোলনে অংশ নেন। পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় আন্দোলনকারীদের তালিকা। অনেককেই রাতে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেফতার হয় ১৮ জন, মোট গ্রেপ্তার ১৬৪। মির্জাপুর ও সখিপুরে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদেরও আটক করা হয়। গোয়েন্দা নজরদারিতে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও মেসগুলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ উপ-পরিচালক মো. সামছুল আলম শিবলী জানান, কিছু শিক্ষক-কর্মচারী ও প্রশাসনের একাংশ আন্দোলনকারীদের দমনে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। আন্দোলনকারীদের ওপর চালানো হয় নিপীড়ন। শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বাধ্য করা হয়। কারফিউর মধ্যে গোয়েন্দারা গোপনে তালিকা করে চালায় রাতভর অভিযান।
মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান খান আজাদ বলেন, “টাঙ্গাইলে গণমামলায় ব্লক ভাগ করে চলে পুলিশের তাণ্ডব।”
২৬ জুলাইয়ের ভয়াবহতা আন্দোলনকারীদের মনে গেঁথে আছে। সেই দিন ছিল ছাত্রদের জন্য ভয়ের, কিন্তু প্রতিজ্ঞারও—জন্মভূমি নয়তো মৃত্যু।