৬. সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য জনজীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করা। এই উদ্দেশ্য থেকে ভালো-মন্দ অবস্থার পর্যালোচনা করার প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা হলো সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নাম উচ্চারণ না করে এভাবে বলা যে ‘সমাজের অনেকেই এই অপরাধ ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।’
৭. দেশের নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়, সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় অথবা সুনির্দিষ্ট কোনো শ্রেণি-গোষ্ঠীর জীবনে হুমকি তৈরি হয়—এমন বিষয় পরিহার করা আবশ্যক। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন শান্তি অথবা শঙ্কার কোনো সংবাদ তাদের কাছে আসে, তখন তারা তা প্রচার করে থাকে। যদি তারা তা রাসুল কিংবা তাদের মধ্যে যারা ক্ষমতার অধিকারী তাদের গোচরে আনত, তবে তাদের মধ্যে যারা তথ্য অনুসন্ধান করে তারা তার যথার্থতা নির্ণয় করতে পারত। তোমাদের প্রতি যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত, তবে তোমাদের অল্পসংখ্যক ছাড়া সবাই শয়তানের অনুসরণ করত।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৮৩)
৮. আলোচনা, সমালোচনা, তর্ক-বিতর্কে যথাসম্ভব শিষ্টাচার ও ভদ্রতা বজায় রাখা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান করো হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সঙ্গে তর্ক করবে উত্তম পন্থায়।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১২৫)
এসব নীতি সামনে রেখে গণমাধ্যমে কথা বললে আশা করা যায় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা যাবে।
অন্যের সমালোচনা কখন বৈধ?
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মানুষের দোষত্রুটি প্রকাশের এক চমৎকার মূলনীতি ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘মন্দ কথার প্রচারণা আল্লাহ পছন্দ করেন না, যার ওপর জুলুম করা হয়েছে সে ছাড়া। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৪৮)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে উসমানিতে লেখা হয়েছে, ‘যদি কারো দ্বিনি বা জাগতিক ত্রুটি জানা যায়, তবে তা প্রচার না করা উচিত। আল্লাহ তাআলা সব শোনেন এবং সবার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানেন। তিনি প্রত্যেককে তার কর্ম অনুসারে প্রতিদান দেবেন। অন্যের দোষত্রুটি প্রচার করা গিবত, যা নিষিদ্ধ ও হারাম। তবে কেউ মাজলুম হলে অবকাশ আছে। অবিচারকারীর অবিচার এবং অত্যাচারীর অত্যাচার মানুষের বলার অবকাশ আছে। যেন মানুষ অবিচার ও জুলুম থেকে বাঁচতে পারে। তেমনি আরো কিছু পরিস্থিতিতে গিবত বা সমালোচনা করার অনুমতি আছে। সম্ভবত এখানে এই নির্দেশ এ কারণে দেওয়া হয়েছে যে একজন মুসলমানের উচিত নয় কোনো মুনাফিকের (কপট ব্যক্তি) নাম প্রকাশ্যে প্রচার করা বা তাকে প্রকাশ্যে অপমান করা। এতে সে (মুনাফিক) উল্টো বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে, বরং পরোক্ষভাবে উপদেশ দেওয়া উচিত, যাতে মুনাফিক নিজেই তা বুঝে নিতে পারে, অথবা একান্তে তাকে উপদেশ দেওয়া উচিত। এতে হয়তো সে সুপথ গ্রহণ করতে পারে। এটাই মহানবী (সা.)-এর কর্মপদ্ধতি ছিল। তিনি কারো নাম প্রকাশ করে তাকে লাঞ্ছিত করতেন না।’ (তাফসিরে উসমানি : ১/৪৭৩)
আল্লাহ সবাইকে দ্বিনের পথে চলার তাওফিক দিন। আমিন।