বাংলাদেশে নারীর কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ বলছে, ২০২৩ সালে যেখানে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৪৫ লাখ ১০ হাজার, ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজারে। একই সময়ে শ্রমশক্তির বাইরে থাকা নারীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজার।
এক বছরে জাতীয়ভাবে প্রায় ২১ লাখ মানুষ চাকরি হারালেও তার মধ্যে প্রায় ১৮ লাখই নারী—যা মোট চাকরি হারানোর ৮৫ শতাংশেরও বেশি। বর্তমানে মাত্র ১৯ শতাংশ নারী শ্রমশক্তিতে যুক্ত, যা বিগত কয়েক বছরের তুলনায় দৃশ্যত নিম্নমুখী।
নারী শ্রমিক সংকটে সবচেয়ে বড় ধাক্কা এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। একসময় যেখানে শ্রমিকদের ৮০ শতাংশের বেশি ছিলেন নারী, সেখানে বর্তমানে এই হার ৫৫ শতাংশের নিচে। কম মজুরি, অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা, কর্মক্ষেত্রে হয়রানি, এবং গৃহস্থালি দায়িত্বের চাপে নারীরা এ খাত থেকে সরে যাচ্ছেন।
বিশ্বব্যাপী ইউএসএআইডির স্টপ-ওয়ার্ক-অর্ডারের ফলে বাংলাদেশে ৫৫টি উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়, যার বেশিরভাগেই নারী কর্মী নিয়োজিত ছিলেন। এতে একদিকে যেমন দেশ সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার সহায়তা হারায়, অন্যদিকে শত শত নারী কর্মসংস্থান হারান।
প্রবাসেও বাংলাদেশের নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে। কভিড-পরবর্তী সময়ে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতারসহ বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিক পাঠানোর হার অর্ধেকে নেমেছে। বিশেষ করে সৌদি আরবের বড় বাজার এখন আফ্রিকান দেশগুলোর দিকে ঝুঁকছে।
নারীরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ (স্বাস্থ্যসেবা, বিউটিফিকেশন, ক্রাফটিং, মোটর মেকানিক ইত্যাদি) গ্রহণ করলেও, তা বাস্তবে কাজে লাগানোর সুযোগ সীমিত। প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চ পদ কিংবা প্রযুক্তি নির্ভর খাতেও নারীর সংখ্যা এখনও অপ্রতুল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে দেশের নারী ক্ষমতায়নের কৃতিত্ব ও অর্জন অনিশ্চয়তায় পড়বে। কর্মসংস্থান সংকোচনের প্রভাব নারীদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক সক্ষমতার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশ, যা কিছুদিন আগেও নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত ছিল, এখন কর্মজীবী নারী হ্রাসের এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি। সময়োপযোগী নীতিগত সহায়তা ও টেকসই কর্মপরিকল্পনা ছাড়া এই ধারা রোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।