আল-মায়াদিন নেটওয়ার্ককে দেওয়া এক বিস্তৃত সাক্ষাৎকারে লেবাননের হিজবুল্লাহর মহাসচিব শেখ নাইম কাসেম আঞ্চলিক সংকট, গাজা যুদ্ধ এবং প্রতিরোধ অক্ষের কৌশলগত অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করেছেন।
তিনি জানান, গাজার উপর ইসরায়েলের আগ্রাসনের পর হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয় যে, গাজা যুদ্ধকে সমর্থন সীমিত পর্যায়ে থাকবে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী পদক্ষেপ পর্যালোচনা করা হবে। তিনি স্পষ্ট করেন, সর্বাত্মক যুদ্ধে না নেমেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব ছিল।
কাসেম বলেন, উত্তর অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি সেনা ও বসতিদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করাই ছিল সমর্থন অভিযানের অন্যতম উদ্দেশ্য। তিনি নিশ্চিত করেন, হিজবুল্লাহ ‘আল-আকসা স্টর্ম’ অভিযানের বিষয়ে পূর্বে অবগত ছিল না, ফলে এতে অংশ নেয়নি।
পেজার বিস্ফোরণের বিষয়ে কাসেম জানান, দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তা ঘাটতি ছিল এবং ইসরায়েলি হামলার আগেই সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা গিয়েছিল। প্রায় ১,৫০০ পেজার তুরস্কে ধ্বংস করা হয়েছে যা ছিল লেবাননের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী মিকাতির কূটনৈতিক উদ্যোগের ফল।
যুদ্ধবিরতির পরেও ইসরায়েলের আগ্রাসন অব্যাহত থাকলে হিজবুল্লাহ প্রতিরোধ চালিয়ে যাবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। একইসাথে, হিজবুল্লাহর অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংসের ইসরায়েলি দাবি ‘গুজব’ বলেও প্রত্যাখ্যান করেন।
ইরানের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, ইরানের সরাসরি যুদ্ধে না জড়িয়েও প্রতিরোধ অক্ষকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিকভাবে সহায়তা প্রদান ছিল কৌশলগত সিদ্ধান্ত। ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর সরাসরি তত্ত্বাবধানেও এ সহায়তা কার্যকর ছিল।
সিরিয়া ইস্যুতে কাসেম বলেন, ইসরায়েল গোলান ও কুনেইত্রা দখল করে রেখেছে এবং সিরিয়ার ক্ষমতাসীনদের বাস্তব প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই। সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণকে ‘বিপজ্জনক’ আখ্যা দিয়ে তিনি জানান, হিজবুল্লাহ তা তাত্ত্বিকভাবে প্রত্যাখ্যান করে, তবে সিরিয়ার অবস্থান পরিবর্তনে তাদের কোনো সক্রিয় হস্তক্ষেপ নেই।
এই সাক্ষাৎকারে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে, হিজবুল্লাহ অঞ্চলের প্রতিরোধ রাজনীতিতে কৌশলগত সংযম, শক্ত অবস্থান এবং আঞ্চলিক মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করছে।