দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকা এবং উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ কারণে চট্টগ্রাম, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বেশ কিছু জেলায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে নিমজ্জিত হয়েছে মাঠের আউশ, আমন বীজতলা, পাট, শাকসবজি, কলা, পেঁপে, তরমুজসহ নানা জাতের মৌসুমি ফসল।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, দেশের মোট ২১টি জেলার প্রায় ৭২ হাজার ৭৬ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে আউশ আবাদ। মোট ৪৪ হাজার ৬৬২ হেক্টর আউশ জমি পানির নিচে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্ষতি হয়েছে আমন বীজতলার ১৪ হাজার ৩৯৩ হেক্টর।
এর পাশাপাশি ৯ হাজার ৬৭৩ হেক্টর জমির শাকসবজি, ২৯৭ হেক্টর বোনা আমন, ১৩৫ হেক্টর পাট, ৩৮৭ হেক্টর পান, ২৯৩ হেক্টর পেঁপে, ১১৪ হেক্টর কলা, ২৮১ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন তরমুজ এবং ১০৪ হেক্টর জমির মরিচ পানিতে তলিয়ে গেছে।
২১ জেলার মধ্যে কুমিল্লায় সবচেয়ে বেশি ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। জেলার ১১ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে। এ তালিকায় রয়েছে আউশ, আমন, শাকসবজি, মরিচ ও আখ।
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে নোয়াখালী জেলা, যেখানে ৭ হাজার ৮০৬ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত। ফেনী জেলায় ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমির।
এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের কোথাও কোথাও অস্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে, যার ফলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমি ফসল পানিতে ডুবে গেছে।
তবে আশার কথা হচ্ছে- গত কয়েক দিনে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। ফলে পানিতে নিমজ্জিত ফসলের হারও ধীরে ধীরে কমছে বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ও ফসলের ধরণ নির্ণয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ক্ষতি নিরূপণ শেষে পুনর্বাসন কার্যক্রমের পরিকল্পনা নেওয়া হবে।
এর আগে জুন মাসের শেষ দিক থেকে দেশের উপকূলবর্তী ও নিম্নাঞ্চলগুলিতে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। লঘুচাপের প্রভাবে তা তীব্রতর হলে অনেক ফসলি মাঠ দীর্ঘ সময় পানিতে ডুবে থাকে, যার ফলে ফসলের শিকড় পচে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ফসল পানিতে ডুবে থাকলে তা চূড়ান্ত ক্ষতির মুখে পড়ে। বিশেষ করে আমন বীজতলা ধ্বংস হলে কৃষকদের পরবর্তী মৌসুমের আবাদও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
প্রসঙ্গত, কৃষি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে এবং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও উপজেলা পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে।