শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ১১:৪১ অপরাহ্ন

সব দলের টার্গেটে ঢাকা-১৮, মাঠে সরব মনোনয়ন প্রত্যাশীরা 

উত্তরা নিউজ প্রতিবেদন
  • আপডেট টাইম: বুধবার, ৯ জুলাই, ২০২৫

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন― প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের এমন বার্তা উঠে আসার পর সারাদেশেই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মাঝে নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে। তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন কিংবা কোন রাজনৈতিক দল থেকে এ বিষয়ে তেমন কোন ঘোষণা না দিলেও  এলাকায় এলাকায় জনসংযোগ করছেন নেতারা। এ থেকে বাদ নেই ঢাকার অন্যতম সংসদীয় ঢাকা-১৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরাও।

দলীয় মনোনয়নের আশায় এবং দলের কাছে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এই সংসদীয় আসনে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন  বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ ছোটবড় অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নতুন-পুরাতন প্রার্থীরা।

 

প্রচারণার মাঠে আছেন যারা

জুনে লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও তারেক রহমানের বৈঠকের পর থেকে উত্তরায় দলীয় লিফলেট হাতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। মাঠে রয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, ২০১৮ সালের উপ-নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পাওয়া এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক এম কফিল উদ্দিন এবং অপর যুগ্ম আহ্বায়ক আফাজ উদ্দিনও।

এসব নেতারা দলীয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা লিফলেট নিয়ে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা-১৮ আসনের অন্তর্গত বৃহত্তর উত্তরার থানায় থানায়। স্থানীয় নেতাকর্মীদের নজর কাড়তে বক্তব্য, সভা-সমাবেশের পাশাপাশি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রুহুল কবির রিজভী, আবদুল আউয়াল মিন্টুর মতো শীর্ষ নেতাদেরও সম্প্রতি উত্তরায় নিয়ে এসে নিজেদের সক্ষমতা জানান দেয়ার চেষ্টাও করেছেন তারা।

ঢাকা-১৮ আসন ঘিরে এমন আগাম নির্বাচন প্রস্তুতি প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই জাতীয় নাগরিক পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মতো জুলাই আন্দোলনে অগ্রগামী ভূমিকা রাখা দলের প্রার্থীরাও।

এরই মধ্যে আসনের বেশিরভাগ এলাকাতেই রঙিন পোস্টার সাঁটিয়েছে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী অধ্যক্ষ আশরাফুল হক। স্থানীয় থানা ও ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটির নানা আয়োজনেও তার সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। 

মাঠে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস ও জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের প্রার্থীরাও। এই আসনে বিগত সময়গুলোতে চরমোনাই পীরের  ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে আনোয়ার হোসেনকে মনোনয়ন দেয়া হলেও রাজনৈতিক পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে তৃণমূল জরিপের মাধ্যমে ঢাকা-১৮ আসনে দলটির প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম চলছে বলে জানা গেছে। এরই লক্ষ্যে সম্প্রতি উত্তরার নওয়াব হাবিবুল্লাহ স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে দলীয় সদস্যদের নিয়ে আসনের  প্রার্থী বাছাই বিষয়ক ভোটাভুটিও করেছে দলটি।

নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তরায় জনসংযোগ ও প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা গেছে হাফেজ্জী হুজুর প্রতিষ্ঠিত খেলাফত মজলিস প্রার্থী অধ্যাপক সাইফ উদ্দিন আহমেদ খন্দকারকেও। এরই মধ্যে দল থেকে ঢাকা-১৮ আসনের প্রার্থী হিসেবে তার নামও ঘোষণা করা হয়েছে। সম্প্রতি দেয়াল ঘড়ি প্রতীকে নেতাকর্মীদের নিয়ে দক্ষিণখান এলাকায় জনসংযোগ করেছেন এই প্রার্থী। 

ঢাকা-১৮ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

বৃহত্তর উত্তরা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৮ আসন ঢাকার অন্যতম প্রবেশদ্বার হওয়ায় এই সংসদীয় আসনটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে ছাত্রজনতা এই আসনের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথগুলোতে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলায় আন্দোলনে পিছু হটে আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা। ৫ আগস্ট ঢাকার সবকটি এলাকা যখন থমথমে তখন উত্তরায় কারফিউ ভেঙ্গে গণভবন অভিমুখে রওনা হয় ছাত্রজনতার বিশাল মিছিল। এর আগে ১৮ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত দফায় দফায় চলা সংঘর্ষে ছাত্রজনতার শক্তিশালী প্রতিরোধে পালাতে বাধ্য হয় তাৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। পরবর্তীতে এখান থেকেই শুরু হয় গণভবনমুখী পদযাত্রা। ফলে স্বৈরাচারখ্যাত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়।

স্থানীয়রা বলছেন ঢাকা-১৮ আসন যার, সংসদও তার। আসন্ন নির্বাচনে এ বাক্যকে সামনে রেখেই যেন ঢাকা-১৮ আসন ঘিরে সরব রাজনৈতিক দলের এসব প্রার্থীরা।

 

উত্তরায় ছাত্রজনতার রাজনৈতিক দল এনসিপির অবস্থান

থানায় থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিনিধি কমিটি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি, জাতীয় যুবশক্তি নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে উত্তরায় এখন পর্যন্ত ভাল অবস্থান গড়ে তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) উত্তরার নেতারা। 

ছবি: উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত স্থানীয় কার্যালয়ে নেতৃবৃন্দের সাথে এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম।

জুলাই শহিদদের কবর জিয়ারত, পরিবারের সদস্যদের খোঁজ-খবর নেয়া, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মতো বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঢাকা-১৮ আসনে সরব রয়েছে ছাত্রজনতার নতুন এই রাজনৈতিক দলটিও। এখন পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্য কোন কর্মসূচি না দেখা গেলেও তরুণদের কেউ কেউ এলাকার ভোটারদের সঙ্গে বেশ সখ্যতা গড়ে তুলেছে।

এই আসনে এনসিপির প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে এনসিপির যুব শাখা জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক ইঞ্জিনিয়ার ফরহাদ সোহেল, শাহ মঈন, মাশরুর রাতুলসহ বেশ কয়েকজনের নাম। উত্তরার বিভিন্ন আয়োজনে এনসিপির এসব নেতাদের অংশগ্রহণও সম্প্রতি বেড়েছে। উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে দলীয় কার্যালয় নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ঐক্য গড়ে তুলেছে সংগঠনটির নেতারা।

সম্প্রতি, দলীয় কার্যালয়ে পরিদর্শনও করে গেছেন জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

 

মাঠের বক্তব্যে যা বলছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা―

এদিকে, নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেয়া এসব নেতারা বলছেন দলের মূল্যায়নই সবচেয়ে বড়। আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির  যুগ্ম আহ্বায়ক আফাজ উদ্দিন এক সভায় বলেছেন,  প্রার্থী হব এটা বলিনি। আবার এটাও বলিনি প্রার্থী হব না। তবে প্রচারণায় সরব থাকা প্রার্থীদের নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।

অনেকের মতে মামা মোস্তফা জামান ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব হওয়ায় মামার পক্ষে জনমত তৈরিতে মাঠের প্রচারণায় সরব এই নেতা।

অপরদিকে, ঢাকা-১৮ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির অপর যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন ও এম কফিল উদ্দিন মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। সাম্প্রতিক সময়ে সাংবাদিক ও ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় দলীয় মূল্যায়নের ব্যাপারে দুজনই আশাবাদী।

আলোচনায় রয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও উত্তরা বিএনপির ত্যাগী নেতা মোস্তাফিজুর রহমান সেগুনের নামও।

নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে উত্তরা নিউজকে তিনি বলেন, দল ঘোষণাই দিয়েছে পরিচ্ছন্নদেরকে এবার দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে। দুঃসময়ে উত্তরায় বিএনপিকে কারা সংগঠিত রেখেছে দলের হাই কমাণ্ড ঠিকই তা জানে। দলের যেকোন সিদ্ধান্তকে সবার আগে প্রাধান্য দিতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102