শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ১২:৫০ পূর্বাহ্ন

নোবেল শান্তিতে নৈতিক পতন? অপেক্ষমাণ ট্রাম্প!

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক
  • আপডেট টাইম: বুধবার, ৯ জুলাই, ২০২৫
সংগৃহীত ছবি | উত্তরা নিউজ

নোবেল বিশ্ব শান্তি পুরস্কারের উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বের শান্তির অবস্থার উন্নয়ন কিন্তু বর্তমানে এটি এক রাজনৈতিক পুরস্কারে পরিণত হয়েছে। আল ফ্রেন্ড নোবেল নামের এক ব্যক্তি নিজের নামে বিজ্ঞানের পাঁচটি শাখায় এই পুরস্কার যখন চালু করেছিলেন তখন তিনি কখনো ভাবেননি যে এমন একদিন আসবে যখন এমন লোকদের এ পুরস্কার দেয়া হবে যারা জাতিতে জাতিতে ভ্রাতৃত্ব ও শান্তি সৃষ্টির জন্য কোনো কাজই তো করেননি না বরং অশান্তি সৃষ্টিতেই জোরালো ভূমিকা রেখেছেন! 

আলফ্রেড নোবেল এই মর্মে ওসিয়ত করেছিলেন যে ‘গত এক বছরে যে ব্যক্তি জাতিগুলোর মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টিতে এবং সশস্ত্র বাহিনী বিলুপ্ত করা বা কমিয়ে আনা ও বিশ্ব শান্তি রক্ষায় সবচেয়ে বেশি বা সর্বোত্তম অবদান রাখবেন তাঁকেই এই শান্তি পুরস্কার দেয়া হবে কোনরকম রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়াই’। নরওয়ের সংসদের ৫ সদস্যের একটি কমিটি এই দায়িত্ব  পালনের জন্য মনোনীত হয়।

কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এই নোবেল শান্তি পুরস্কার তার আসল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয় এবং এটি পরিণত হয় পশ্চিমা দেশগুলোর ক্ষমতাসীনদের অসৎ উদ্দেশ্যের বিরোধী সরকার গুলোকে চাপে রাখার ও পশ্চিমা শক্তিগুলোর পুরনো সব শত্রুর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হাতিয়ারে!

তাই এই শান্তি পুরস্কার এখন আর মোটেই নির্ভরযোগ্য নয়। এটি দেয়া হচ্ছে পাশ্চাত্যের অত্যন্ত জালিম গণহত্যাকারীদেরকে এবং প্রাচ্যে তাদের শোষণ ও হত্যাযজ্ঞের সহযোগী ব্যক্তিদেরকে! তাই এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পুরস্কারই বলা উচিত।

নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য সম্ভাব্য মনোনীতদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন ট্রাম্পও!

সর্বপ্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রস্তাব তোলা হয় ২০১৮ সালে। উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে তার বৈঠক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছে বলে দাবি করা হয়, কিন্তু বাস্তবে কোন কার্যকর শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি বরং পূর্ব এশিয়ায় অশান্তি, উত্তেজনা ও অস্ত্র প্রতিযোগিতা বেড়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এরপর ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক পরমাণু শান্তি চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান। এছাড়াও তিনি ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা জোরদার করেন সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতির অংশ হিসেবে। ওদিকে তিনি ইহুদিবাদী ইজরায়েলের প্রতি সর্বাত্মক ও অন্ধ সহায়তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করেন। এরপর তিনি ইরানের ওপর হামলার হুমকিও জোরদার করেছেন। এভাবে তিনি হয়ে পড়েন অশান্তির প্রধান চালিকাশক্তি।

এরপর শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার স্লোগান দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কিন্তু বিশ্বে উত্তেজনা প্রশমন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার কোন ওয়াদাই তিনি বাস্তবায়ন করেননি। ইউক্রেনে  যুদ্ধ বন্ধ করা সংক্রান্ত তার ওয়াদা কখনো বাস্তবায়ন হয়নি‌। ওদিকে গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা ও যুদ্ধ অপরাধে সহায়তা জোরদার করেন ট্রাম্প। নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার আশায় গ্রাম ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন তিনি ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন, কিন্তু বাস্তবে ইহুদিবাদী ইসরাইলের প্রতি তার অন্ধ সমর্থন ও সহযোগিতার কথা তিনি বারবার প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন।

গৌরবের মাধ্যম থেকে রাজনীতির হাতিয়ারে পরিণত নোবেল শান্তি পুরস্কার  

কথিত নোবেল শান্তি পুরস্কার কে বারবার রাজনীতির হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। বিচ্যুতির এই অব্যাহত প্রক্রিয়ায় নিরপরাধ মানুষের রক্তে রঞ্জিত বহু রাজনৈতিক নেতা এই কথিত শান্তি পুরস্কার অর্জনে সফল হয়েছে। যেমন

১. সাবেক ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী মোনাচেম বেগিন

কুখ্যাত নরঘাতক মোনাচেম বেগিন ১৯৭৮ সালে কথিত ক্যাম্প ডেভিড শান্তি চুক্তির জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন! মিশরের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছিল! অথচ ১৯৪৮ সালের এপ্রিল মাসে ফিলিস্তিনের দের ইয়াসিন গ্রামে গণহত্যায় জড়িত ছিলেন এই বেগিন। ওই গণহত্যায় অন্তত ১০০ ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু হত্যাযজ্ঞ ও এমনকি ধর্ষণের শিকার হয়। এই উপলক্ষে নর ঘাতক বেগিনের নেতৃত্বে রাতের বেলায় উৎসব অনুষ্ঠান করেছিল হানাদার দখলদার ইসরাইলি সেনারা!

২. ইসরাইলের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী আইজাক রবিন 

১৯৯৪ সালের কথিত অসলো শান্তি চুক্তির জন্য তাকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়।  অথচ আইজ্যাক রবিন ছিলেন ১৯৪৮ সালের  ইসরাইল- আরব যুদ্ধ ও ১৯৬৭ সালের আগ্রাসী ইজরাইলি যুদ্ধের অন্যতম প্রধান হোতা।

৩. ইসরাইলের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী শিমন প্যারেজ 

শিমন প্যারেজও ১৯৯৪ সালে কথিত অসলো শান্তি চুক্তির জন্য যৌথভাবে আইজাক রবিন ও ইয়াসিন আরাফাতের সঙ্গে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। প্যারিসের প্রধানমন্ত্রী তো চলাকালে লেবাননের উপর ক্রোধের গুচ্ছ নামের একটি আগ্রাসী অভিযান চালায় ইসরাইল ওই ধ্বংসাত্মক আগ্রাসনে দক্ষিণ লেবাননের বিপুল সংখ্যক  বেসামরিক নাগরিক ঘরবাড়ি ছেড়ে উত্তর লেবাননে চলে আসছে বাধ্য হন। এ অভিযান চলাকালেই দক্ষিণ লেবাননের কানা গ্রামে। হানাদার ইসরাইলি সেনারা বড় ধরনের গণহত্যা চালায় এতে শত শত লেবাননি হতাহত হন।

৪. মিয়ানমারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অন সান সূচি

১৯৯১ সালে সূচিকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয় এই অজুহাতে যে তিনি মিয়ানমারে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অহিংস গণ-আন্দোলন করেছিলেন, অথচ মিয়ানমারের হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমানের উপর দেশটির সেনাবাহিনীর নৃশংস গণহত্যা অভিযানকে তিনি সমর্থন দিয়ে গেছেন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রাথমিক মানবাধিকার লংঘনকেও তিনি নীরব দর্শক হিসেবে প্রত্যক্ষ করেছেন।

৫. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪ তম প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা   

২০০৯ সালে বারাক ওবামা নোবেল পুরস্কার পান এই অজুহাতে যে তিনি আন্তর্জাতিক কূটনীতিকে জোরদার করেছিলেন। অথচ ওবামার শাসনামলে আটটি মুসলিম দেশে ব্যাপক মার্কিন সামরিক অভিযান অভিযান চালানো চালানো হয়েছিল‌  এই আটটি দেশের মধ্যে ছিল পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, লিবিয়া,  ইরাক ও সোমালিয়া।  এইসব অভিযানে বহু নিরপরাধ বেসামরিক নারী, পুরুষ ও  শিশু প্রান হারায়।

নিউজটি শেয়ার করুন..

  • Print
  • উত্তরা নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন:
এ জাতীয় আরো খবর..
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৫ | Technical Support: Uttara News Team
themesba-lates1749691102