প্রায় এক বছর আগে এক রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রফেসর ইউনূসের সরকার, যাকে দেশ-বিদেশে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে, সেই আশা ও প্রত্যাশা অনেকটাই ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়েছে।
অভ্যুত্থানের সময় দেশে না থাকার পর বিদেশ থেকেই দেশে ফিরে দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রফেসর ইউনূস। কিন্তু সরকারের গঠন ও পরিচালনায় নানা ধরনের ব্যর্থতা এবং অভ্যন্তরীণ বিভাজনের কারণে সরকারের কার্যকারিতা দুর্বল হয়েছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে পুলিশের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও মব সন্ত্রাসের ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
উপদেষ্টা পরিষদে নির্বাচন নিয়ে মতপার্থক্য, সরকারি সিদ্ধান্তগুলোতে অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র ও ভেতরে ভেতরে অন্যায় কৌশলের কারণে সরকারের সম্মিলিত কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রফেসর ইউনূস ব্যক্তিপূজা ও দলীয় স্বার্থ থেকে দূরে থাকার দাবি করলেও, তার আশেপাশে ক্ষমতার জন্য লড়াই ক্রমশ তীব্র হচ্ছে।
অন্যদিকে, বাজার পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয় থাকলেও, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক আস্থা সংকটাপন্ন। কৃষকের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্নীতির কারণে গণতন্ত্রের পথে দেশের অগ্রগতি নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মহলও সরকারের ভেতরে ভিন্নধারার অস্তিত্বকে নজর রাখছে এবং দেশীয় প্রশাসনিক দুর্বলতাকে উদ্বেগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। বর্তমান পরিস্থিতে প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা, যা একটি অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক সমঝোতার ওপর নির্ভরশীল।
সরকারের ভেতরে সরকার—এই সংকট থেকে উত্তরণই এখন দেশের গণতন্ত্রের সঠিক পথে ফেরার একমাত্র উপায় বলে অভিহিত হচ্ছে।